পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবগমগ పిసి & রহিয়াছে, এক-একবার জলের স্রোত প্রবল হয় এবং শিকলি কলসীর উপর পড়িয়া শব্দ করিতে থাকে। বৈদ্যনাথ জলের উপর ছপছপ শব্দ করিতে করিতে তাড়াতাড়ি সেই কলসীর কাছে উপস্থিত হইলেন। গিয়া দেখিলেন কলসী শন্য। তথাপি নিজের চক্ষকে বিশ্বাস করিতে পারিলেন না— দই হস্তে কলসী তুলিয়া খুব করিয়া ঝাঁকানি দিলেন। ভিতরে কিছুই নাই। উপড়ে করিয়া ধরিলেন। কিছুই পড়িল না। দেখিলেন, কলসীর গলা ভাঙা । যেন এক কালে এই কলসীর মুখ সম্পণে বন্ধ ছিল, কে ভাঙিয়া ফেলিয়াছে। তখন বৈদ্যনাথ জলের মধ্যে দুই হস্ত দিয়া পাগলের মতো হাংড়াইতে লাগিলেন। কদমস্তরের মধ্যে হাতে কী-একটা ঠেকিল, তুলিয়া দেখিলেন মড়ার মাথা—সেটাও একবার কানের কাছে লইয়া ঝাঁকাইলেন— ভিতরে কিছুই নাই। ছ:ড়িয়া ফেলিয়া দিলেন। অনেক খ:জিয়া নরকঙ্কালের অস্থি ছাড়া আর কিছুই পাইলেন না। দেখিলেন, নদীর দিকে দেয়ালের এক জায়গা ভাঙা; সেইখান দিয়া জল প্রবেশ করিতেছে, এবং তাঁহার পববতী ষে ব্যক্তির কোঠাঁতে দৈবধনলাভ লেখা ছিল সেও সম্ভবত এই ছিদ্ৰ দিয়া প্রবেশ করিয়াছিল। অবশেষে সক্ষপণ হতাশ হইয়া ’মা’ বলিয়া মস্ত একটা মৰ্মভেদী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন— প্রতিধ্বনি যেন অতীত কালের আরও অনেক হতাশ্বাস ব্যক্তির নিশ্বাস একত্রিত করিয়া ভীষণ গাম্ভীয্যের সহিত পাতাল হইতে পতনিত হইয়া উঠিল। সবাগে Gল কাদা মাখিয়া বৈদ্যনাথ উপরে উঠলেন । জনপণে কোলাহলময় পথিবী তাঁহার নিকটে আদ্যোপাত মিথ্যা এবং সেই শতেখলবন্ধ ভগ্নঘটের মতো শান্য বোধ হইল। আবার যে জিনিসপত্র বধিতে হইবে, টিকিট কিনিতে হইবে, গাড়ি চড়িতে হইবে, বাড়ি ফিরিতে হইবে, সতীর সহিত বাকবিতণ্ডা করিতে হইবে, জীবন প্রতিদিন বহন করিতে হইবে, সে তাঁহার অসহ্য বলিয়া বোধ হইল। ইচ্ছা হইল, নদীর জীণ পাড়ের মতো ঝপে করিয়া ভাঙিয়া জলে পড়িয়া যান। কিন্তু তব সেই জিনিসপত্র বাঁধিলেন, টিকিট কিনিলেন, এবং গাড়িও চড়িলেন। এবং একদিন শীতের সায়াহ্নে বাড়ির বারে গিয়া উপস্থিত হইলেন। আশ্বিন মাসে শরতের প্রাতঃকালে বারের কাছে বসিয়া বৈদ্যনাথ অনেক প্রবাসীকে বাডি ফিরিতে দেখিয়াছেন, এবং দীঘশলাসের সহিত মনে-মনে এই বিদেশ হইতে দেশে ফিরিবার সখের জন্য লালায়িত হইয়াছেন - তখন আজিকার সন্ধ্যা সবনেরও অগম্য ছিল। বাড়িতে প্রবেশ করিয়া প্রাঙ্গণের কাঠাসনে নিবোধের মতো বসিয়া রহিলেন, অন্তঃপরে গেলেন না। সব প্রথমে ঝি তাঁহাকে দেখিয়া আনন্দকোলাহল বাধাইয়া দিল -- ছেলেরা ছটিয়া আসিল, গহিণী ডাকিয়া পাঠাইলেন। বৈদানাথের যেন একটা ঘোর ভাঙিয়া গেল, আবার যেন তাঁহার সেই প্যবসংসারে জাগিয়া উঠিলেন। শাকমুখে লান হাস্য লইয়া, একটা ছেলেকে কোলে করিয়া, একটা ছেলের হাত ধরিয়া অন্তঃপরে প্রবেশ করিলেন।