পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>>げ গল্পগুচ্ছ তাঁহার মাথার উপর ঝরিতে থাকিলে তিনি কি ভ্ৰক্ষেপ করেন। অধীরচিত্ত ললিতসিংহের নিকট এই অজস্র সম্মান সেই শকে পত্রের ন্যায় নীরস লঘ ও অকিঞ্চিৎকর বলিয়া বোধ হইল। অবশেষে অশব যখন অন্তঃপরপ্রাসাদের সম্মুখে গিয়া উপস্থিত হইল তখন মহেতের জন্য সেনাপতি তাঁহার বলগা আকষণ করিলেন ; অশব মহেতের জন সন্তব্ধ হইল: মহেতের জন্য ললিতসিংহ একবার প্রাসাদবাতায়নে তৃষিত দষ্টি নিক্ষেপ করিলেন; মাহতের জন্য দেখিতে পাইলেন, দুইটি লাজানত নেত্র একবার চকিতের মতো তাঁহার মুখের উপর পড়িল এবং দুইটি অনিন্দিত বাহ হইতে একটি পাপমালা খসিয়া তাঁহার সম্মুখে ভূতলে পতিত হইল। তৎক্ষণাৎ অশব হইতে নামিয়া সেই মালা কিরীটচড়ায় তুলিয়া লইলেন এবং আর-একবার কৃতাৰ্থ দটিতে উধের্ম চাহিলেন। তখন বার রন্ধ হইয়া গিয়াছে, দীপ নিবাপিত । তৃতীয় পরিচ্ছেদ সহস্ৰ শত্রর নিকট যে অবিচলিত, দুইটি চকিত হরিণনেহের নিকট সে পরাভূত । সেনাপতি বহুকাল ধৈৰ্যকে পাষাণদণের মতো হাদয়ে রক্ষা কবিযা আসিয়াছেন, গতকল্য সন্ধ্যাকালে দুটি কালো চোখের সলঙ্গজ সসম্প্রম দষ্টি সেই দগের ভিত্তিতে গিয়া আঘাত করিয়াছে এবং এতকালের ধৈর্য মহোতে ভূমিসাৎ হইসা গেছে। কিন্তু, ছি ছি, সেনাপতি, তাই বলিয়া কি সন্ধ্যার অন্ধকারে চোরের মতে রাক্তান্তঃপরের উদ্যানপ্রাচীব লঙ্ঘন করিতে হয়! তুমিই না ভুবনবিজয়ী বীরপরষে। কিন্তু, যে উপন্যাস লেখে তাহার কোথাও বাধা নাই ; বাবীরাও বাররোধ করে না, অসযশপশার পা রমণীরাও আপত্তি প্রকাশ করে না, অতএব এই সুরমা বসন্তসন্ধ্যায় দক্ষিণবায়বীজিত রাজান্তঃপরের নিভৃত উদ্যানে একবার প্রবেশ করা যাক । হে পাঠিকা, তোমরাও আইস, এবং পাঠকগণ, ইচ্ছা করিলে তোমরা ও অনলেতী” হইতে পার— আমি অভয়দান করিতেছি । একবার চাহিয়া দেখো, বকুলতলের তৃণশয্যায সন্ধ্যাতারাব প্রতিমার মতো ওই রমণী কে। হে পাঠক, হে পাঠিকা, তোমরা উহাকে জান কি। অমন রপ কোথাও দেখিয়াছ ? রপের কি কখনো বর্ণনা করা যায়। ভাষা কি কখনো কোনো মন্ত্রবলে এমন জীবন যৌবন এবং লাবণ্যে ভরিয়া উঠিতে পারে। হে পাঠক তোমার যদি দ্বিতীয় পক্ষের বিবাহ হয় তবে সীর মুখ স্মরণ করো: হে রুপসী পাঠিকা, যে যাবতীকে দেখিয়া তুমি সঙ্গিনীকে বলিয়াছ ইহাকে কণী এমন ভালো দেখিতে, ভাই। হউক সন্দেরী, কিন্তু ভাই, তেমন শ্ৰী নাই তাহার মথে মনে করো - ওই তরতলবতিনী রাজকুমারীর সহিত তাহার কিঞ্চিৎ সাদৃশ্য উপলব্ধি করিবে । পাঠক এবং পাঠিকা, এবার চিনিলে কি। উনিই রাজকন্যা বিদামোলা। রাজকুমারী কোলের উপর ফলে রাখিয়া নতমুখে মালা গাঁথিতেছেন, সহচরী কেহই নাই। গাঁথিতে গাঁথতে এক-একবার অঙ্গলে আপনার স্কুমার কাযে শৈথিলা করিতেছে; উদাসীন দটি কোন-এক অতিদীরবতী চিন্তারাজ্যে ভ্রমণ করিয়া বেড়াইতেছে। রাজকুমারী কী ভাবিতেছেন।