পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>ミ8 গল্পগুচ্ছ উধেৰ উঠিতে লাগিল। প্রথমে রাজার চন্দ্রবংশীয় আদিপর্বষের কথা আরম্ভ করিলেন। ক্ৰমে ক্ৰমে কত যন্ধবিগ্রহ, শৌর্যবীয, যজ্ঞদান, কত মহদনষ্ঠানের মধ্য দিয়া তাঁহার রাজকাহিনীকে বতমান কালের মধ্যে উপনীত করিলেন। অবশেষে সেই দর্যমতিবদ্ধ দটিকে ফিরাইয়া আনিয়া রাজার মাখের উপর স্থাপিত করিলেন এবং রাজ্যের সমস্ত প্রজাহদয়ের একটা বহৎ অব্যক্ত প্রীতিকে ভাষায় ছন্দে মতিমান করিয়া সভার মাঝখানে দাঁড় করাইয়া দিলেন— যেন দরে দ্রান্তর হইতে শতসহস্ৰ প্রজার হদয়স্রোত ছটিয়া আসিয়া রাজপিতামহদিগের এই অতিপরাতন প্রাসাদকে মহাসংগীতে পরিপণ করিয়া তুলিল— ইহার প্রত্যেক ইস্টককে যেন তাহারা পশ করিল, আলিঙ্গন করিল, চুবন করিল, উধের অন্তঃপুরের বাতায়নসম্মুখে উথিত হইয়া রাজলক্ষীস্বর্যপা প্রাসাদলক্ষীদের চরণতলে নেহাদ্র ভক্তিভরে লন্ঠিত হইয়া পড়িল, এবং সেখান হইতে ফিরিয়া আসিয়া রাজাকে এবং রাজার সিংহাসনকে মহামহোল্লাসে শতশতবার প্রদক্ষিণ করিতে লাগিল। অবশেষে বলিলেন, “মহারাজ, বাক্যেতে হার মানিতে পারি, কিন্তু ভক্তিতে কে হারাইবে।” এই বলিয়া কপিতদেহে বসিয়া পড়িলেন। তখন আশ্রজেলে-অভিষিক্ত প্রজাগণ জয় জয় রবে আকাশ কপিাইতে লাগিল । সাধারণ জনমণ্ডলীর এই উন্মত্ততাকে ধিক্কারপণ হাস্যের বারা অবজ্ঞা করিয়া পণ্ডেরীক আবার উঠিয়া দাঁড়াইলেন। দন্ত গজানে জিজ্ঞাসা করিলেন, "বাক্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কে।” সকলে এক মহেনতে স্তব্ধ হইয়া গেল । তখন তিনি নানা ছন্দে অদভূত পাণ্ডিত্য প্রকাশ করিয়া বেদ বেদান্ত আগম নিগম হইতে প্রমাণ করিতে লাগিলেন— বিশ্বের মধ্যে বাক্যই সব শ্রেষ্ঠ । বাক্যই সত্য বাক্যই ব্রহয়। ব্রহমা বিষ্ণু মহেশ্বর বাকোর বশ, অতএব বাক্য তাঁহাদের অপেক্ষা বড়ো । ব্রহমা চারি মুখে বাক্যকে শেষ করিতে পারিতেছেন না; পঞ্চানন পচি মুখে বাক্যের অন্ত না পাইয়া অবশেষে নীরবে ধ্যানপরায়ণ হইয়া বাক্য খুজিতেছেন। এমনি করিয়া পাণ্ডিত্যের উপর পাণ্ডিত্য এবং শাস্ত্রের উপর শাস্য চাপাইয়া বাক্যের জন্য একটা অভ্ৰভেদী সিংহাসন নিমাণ করিয়া বাক্যকে মত লোক এবং সরলোকের মস্তকের উপর বসাইয়া দিলেন এবং পনবার বন্ধুনিনাদে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাক্যের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ কে।” দপভরে চতুদিকে নিরীক্ষণ করিলেন ; যখন কেহ কোনো উত্তর দিল না তখন ধীরে ধীরে আসন গ্রহণ করিলেন। পণ্ডিতগণ সাধু সাধন ধন্য ধন্য করিতে লাগিল ; রাজা বিস্মিত হইয়া রহিলেন এবং কবি শেখর এই বিপুল পণ্ডিত্যের নিকটে আপনাকে ক্ষুদ্র মনে করিলেন। আজিকার মতো সভা ভঙ্গ হইল । ළු পরদিন শেখর আসিয়া গান আরম্ভ করিয়া দিলেন— বান্দালনে প্রথম বাঁশি বাজিয়াছে, তখনো গোপিনীরা জানে না কে বাজাইল, জানে না কোথায় বাজিতেছে। একবার মনে হইল, দক্ষিণপবনে বাজিতেছে; একবার মনে হইল, উত্তরে গিরিগোবধানের শিখর হইতে ধৰনি আসিতেছে; মনে হইল, উদয়াচলের উপরে দাঁড়াইয়া কে মিলনের