পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সভা వ86 ঘটাইতে ইচ্ছা করিত যাহা দেখিয়া প্রতাপ আশ্চর্য হইয়া যাইত, বলিত, “তাই তো, আমাদের সভির যে এত ক্ষমতা তাহা তো জানিতাম না।” মনে করো, সভা যদি জলকুমারী হইত, আস্তে আস্তে জল হইতে উঠিয়া একটা সাপের মাথার মণি ঘাটে রাখিয়া যাইত; প্রতাপ তাহার তুচ্ছ মাছ ধরা রাখিয়া সেই মানিক লইয়া জলে ডুব মারিত; এবং পাতালে গিয়া দেখিত, রুপার আটালিকায় সোনার পালঙ্কে— কে বসিয়া ?--- আমাদের বাণীকঠের ঘরের সেই বোবা মেয়ে সত্ৰআমাদের স. সেই মণিদীপত গভীর নিস্তদ্ধ পাতালপরীর একমাত্র রাজকন্যা। তাহা কি হইতে পারিত না। তাহা কি এতই অসম্ভব। আসলে কিছুই অসম্ভব নয়, কিন্তু তপ ও স, প্রজাশন্য পাতালের রাজবংশে না জমিয়া বাণীকঠের ঘরে আসিয়া জন্মিয়াছে এবং গোঁসাইদের ছেলে প্রতাপকে কিছুতেই আশ্চর্য করিতে পারিতেছে না। 8 স:eব বয়স ক্রমেই বাড়িয়া উঠিতেছে। কুমে সে যেন আপনাকে আপনি অনুভব করিতে পারিতেছে । যেন কেনে-একটা পণিমাতিথিতে কোনো-একটা সমুদ্র হইতে একট, জ্ঞেয়ারের স্রোত আসিয়া তাহার অন্তরাত্মাকে এক নতন অনিবাচনীয় চেতনাশস্তি:ত পরিপণ করিয়া তুলিতেছে । সে আপনাকে আপনি দেখিতেছে, ভাবিতেছে, প্রশ্ন কর3েছ, এবং কঝিতে পাবিতেছে না। গভীর পণি'মারাত্রে সে এক-একদিন ধীরে শয়নগাহের বার খলিয়া ভয়ে ভয়ে ম,খ বড় ইয়া বাহিরের দিকে চাহিযা দেখে পণিমাপ্রকৃতিও সভার মতো একাকিনী সপত জগতের উপর জাগিয়া বসিয়া- - যৌবনের রহসে পালকে বিষাদে অসীম নিক্তন হার একেবারে শেষ সীমা পর্যন্ত, এমনকি তাহা অতিক্ৰম করিয়াও থমথম কবিতেছে, একটি কথা কহিতে পারিতেছে না । এই নিস্তদ্ধ ব্যাকুল প্রকৃতির প্রান্তে একটি নিমতৰ ব্যাকুল বালিকা দাঁড়াইয়া । এ দিকে কন্যাভারগ্রন্সত পিতামাত চিন্তিত হইষী উঠিয়াছেন । লোকেও নিন্দা আরম্ভ করিয়াছে ! এমনকি, এক-ঘরে করিবে এমন জনরবও শনা যায়। বাণীকঠের সচ্ছল অবস্থা, দুই বেলাই মাছভাত খায়, এজন্য তাহার শত্র ছিল। দীপর ষে বিস্তর পরামর্শ হইল। কিছুদিনের মতো বাণী বিদেশে গেল। অবশেষে ফিরিয়া আসিয়া কহি ল, “চলো, কলিকাতায় চলো ৷” বিশেযাহার উদযোগ হইতে লাগিল। কুয়াশা-ঢাকা প্রভাতের মতো সভার সমস্ত হৃদয় আশ্ররোপে একেবারে ভরিয়া গেল। একটা অনিদিষ্ট আশঙ্কা -বশে সে কিছদিন হইতে ক্ৰমাগত নিবাক জলতুব মতো তাহার বাপমায়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিরিত— ডাগর চক্ষ মেলিয়া তাঁহাদের মুখের দিকে চাহিয়া কণী-একটা বকিতে চেষ্টা করিত, কিন্তু তাঁহারা কিছ ককাইয়া বলিতেন না। ইতিমধ্যে একদিন অপরাহুে জলে ছিপ ফেলিয়া প্রতাপ হাসিয়া কহিল, “কণী রে সন, তোর নাকি বর পাওয়া গেছে, তুই বিয়ে করতে যাচ্ছিস ; দেখিস আমাদের ভুলিস নে ৷” বলিয়া আবার মাছের দিকে মনোযোগ করিল। SO