পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬ O গল্পগুচ্ছ সম্পাদক আমার সত্ৰী-বতমানে প্রভা সম্বন্ধে আমার কোনো চিন্তা ছিল না। তখন প্রভা অপেক্ষা প্রভার মাতাকে লইয়া কিছু অধিক ব্যস্ত ছিলাম। তখন কেবল প্রভার খেলাটুকু হাসিটকু দেখিয়া, তাহার আধো আধো কথা শনিয়া, এবং আদরটকু লইয়াই তৃপ্ত থাকিতাম; যতক্ষণ ভালো লাগিত নাড়াচাড়া ಕ್ಡಣ್ಣ' লইতাম। তাহাকে যে বহন চিন্তা ও চেষ্টায় মানুষ করিয়া তুলিতে হইবে এ কথা আমার মনে আসে নাই। অবশেষে অকালে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হইলে একদিন মায়ের কোল হইতে খসিয়া মেয়েটি আমার কোলের কাছে আসিয়া পড়িল, তাহাকে বকে টানিয়া লইলাম। কিন্তু মাতৃহীনা দহিতাকে বিগণে সেনহে পালন করা আমার কতব্য এটা আমি বেশি চিন্তা করিয়াছিলাম না পত্নীহীন পিতাকে পরম যত্নে রক্ষা করা তাহার কতব্য এইটে সে বেশি অনুভব করিয়াছিল, আমি ঠিক বুঝিতে পারি না। কিন্তু ছয় বৎসর বয়স হইতেই সে গিন্নিপনা আরম্ভ করিয়াছিল। বেশ দেখা গেল, ওইটুকু মেয়ে তাহার বাবার একমাত্র অভিভাবক হইবার চেষ্টা করিতেছে। আমি মনে মনে হাসিয়া তাহার হস্তে আত্মসমপণ করিলাম। দেখিলাম, যতই আমি অকমণ্য অসহায় হই ততই তাহার লাগে ভালো : দেখিলাম, আমি নিজে কাপড়টা ছাতাটা পাড়িয়া লইলে সে এমন ভাব ধারণ কবে যেন তাহার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হইতেছে। বাবার মতো এতবড়ো পর্তুল সে ইতিপবে কখনো পায নাই, এইজন্য বাবাকে খাওযাইয়া পরাইযা বিছানায শয়াইয়া সে সমস্ত দিন বড়ো আনন্দে আছে । কেবল ধারাপাত এবং পদ্যপাঠ প্রথমভাগ অধ্যাপনের সময় আমার পিতৃত্বকে কিঞ্চিৎ সচেতন করিয়া তুলিতে হইত। কিন্তু মাঝে মাঝে ভাবনা হইত মেয়েটিকে সৎপাত্রে বিবাহ দিতে হইলে অনেক অর্থের আবশ্যক— আমার এত টাকা কোথায় । মেয়েকে তো সাধ্যমত লেখাপড়া শিখাইতেছি, কিন্তু একটা পরিপািণ মুখের হাতে পড়িলে তাহার কী দশা হইবে। উপাজনে মন দেওয়া গেল। গবমেণ্ট-আপিসে চাকরি কবিবার বয়স গেছে, অন্য আপিসে প্রবেশ করিবারও ক্ষমতা নাই। অনেক ভাবিয়া বই লিখিতে লাগিলাম । বাঁশের নল ফটো করিলে তাহাতে তেল রাখা যায় না, জল রাখা যায় না, তাহার ধারণাশক্তি মলেই থাকে না; তাহাতে সংসারের কোনো কাজই হয় না, কিন্তু ফ: দিলে বিনা খরচে বশি বাজে ভালো। আমি সিথর জানিতাম, সংসারের কোনো কাজেই যে হতভাগ্যের বধি খেলে না, সে নিশ্চয়ই ভালো বই লিখিবে। সেই সাহসে একখানা প্রহসন লিখিলাম, লোকে ভালো বলিল এবং রঙ্গভূমিতে অভিনয় হইয়া গেল। সহসা যশের আবাদ পাইয়া এমনি বিপদ হইল, প্রহসন আর কিছুতেই ছাড়িতে পারি না। সমস্ত দিন ব্যাকুল চিন্তান্বিত মুখে প্রহসন লিখিতে লাগিলাম। বাবে না ?