পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>やbf গল্পগুচ্ছ এসেন্স, কখনো বা কিছ মিষ্টদ্রব্য কিনিয়া আনিয়া শৈলবালাকে গোপনে দিয়া যাইত। এমনি করিয়া একটুখানি ঘনিষ্ঠতার সত্রপাত হয়। অবশেষে কখন একদিন হরসন্দরী গহকায্যের অবকাশে আসিয়া বারের ছিদ্ৰ দিয়া দেখিল, নিবারণ এবং শৈলবালা বসিয়া কড়ি লইয়া দশ-পাঁচিশ খেলিতেছে। বড়া বয়সের এই খেলা বটে। নিবারণ সকালে আহারাদি করিয়া যেন আপিসে বাহির হইল, কিন্তু আপিসে না গিয়া অন্তঃপরে প্রবেশ করিয়াছে। এ প্রবঞ্চনার কী আবশ্যক ছিল। হঠাৎ একটা জলন্ত বজ্রশলাকা দিয়া কে যেন হরসন্দেরীর চোখ খলিয়া দিল, সেই তীব্র তাপে চোখের জল বাপ হইয়া শুকাইয়া গেল। হরসন্দরী মনে-মনে কহিল, "আমিই তো উহাকে ঘরে আনিলাম, আমিই তো মিলন করাইয়া দিলাম, তবে আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার কেন— যেন আমি উহাদের সখের কাঁটা।’ হরসন্দরী শৈলবালাকে গহকায শিখাইত। একদিন নিবারণ মখ ফটিয়া বলিল, নহে ।” বড়ো একটা তীব্র উত্তর হরসন্দেরীর মুখের কাছে আসিয়াছিল; কিন্তু কিছ বলিল না, চুপ করিয়া গেল। সেই অবধি বউকে কোনো গহকাযে হাত দিতে দিত না; রাধাবাড়া দেখাশনা সমস্ত কাজ নিজে করিত। এমন হইল, শৈলবালা আর নড়িয়া বসিতে পারে না, হরসন্দেরী দাসীর মতো তাহার সেবা করে এবং স্বামী বিদষকের মতো তাহার মনোরঞ্জন করে। সংসারের কাজ করা, পরের দিকে তাকানো যে জীবনের কতব্য এ শিক্ষাই তাহার হইল না। হরসন্দেরী যে নীরবে দাসীর মতো কাজ করিতে লাগিল তাহার মধ্যে ভারি একটা গব আছে। তাহার মধ্যে নানতা এবং দীনতা নাই। সে কহিল, তোমরা দই শিশতে মিলিয়া খেলা করো, সংসারের সমস্ত ভার আমি লইলাম। তৃতীয় পরিচ্ছেদ হায়, আজ কোথায় সে বল যে বলে হরসন্দেরী মনে করিয়াছিল স্বামীর জন্য চিরজীবনকাল সে আপনার প্রেমের দাবির অধোক অংশ অকাতরে ছাড়িয়া দিতে পারবে। হঠাৎ একদিন পণিমার রাত্রে জীবনে যখন জোয়ার আসে, তখন দই কল পলাবিত করিয়া মানুষ মনে করে, আমার কোথাও সীমা নাই। তখন যে একটা বহৎ প্রতিজ্ঞা করিয়া বসে জীবনের সদেীঘ ভাঁটার সময় সে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিতে তাহার সমস্ত প্রাণে টান পড়ে। হঠাৎ ঐশ্বয্যের দিনে লেখনীর এক অচিড়ে যে দানপত্র লিখিয়া দেয় চিরদারিদ্র্যের দিনে পলে পলে তিল তিল করিয়া তাহা শোধ করিতে হয়। তখন বঝো যায়, মানুষ বড়ো দীন, হাদয় বড়ো দাব’ল, তাহার ক্ষমতা অতি বৎসামান্য । দীর্ঘ রোগাবসানে ক্ষীণ রক্তহীন পাডু কলেবরে হরসন্দরী সে দিন শুরু দ্বিতীয়ার চাঁদের মতো একটি শীণ রেখামাত্র ছিল: সংসারে নিতান্ত লম্ব হইয়া