পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ぬしfO গল্পগুচ্ছ রাজকন্যা প্রতিদিন উত্তর করে, “সে কথা আজ থাক, আর-একদিন বলিব।" এমনি করিয়া আরও চার-পাঁচ বৎসর কাটিয়া যায়। শেষে ব্রাহমণ একদিন আসিয়া বড়ো রাগ করিয়া বলিল, “আজ যদি তুমি না বল তুমি আমার কে হও, তবে আমি তোমার এই সাতমহলা বাড়ি ছাড়িয়া চলিয়া যাইব ।” তখন রাজকন্যা কহিলেন, "আচ্ছা, কাল নিশ্চয়ই বলিব ।” পরদিন ব্রাহমণতনয় পাঠশালা হইতে ঘরে আসিয়াই রাজকন্যাকে বলিল, “আজ বলিবে বলিয়াছিলে, তবে বলো।” রাজকন্যা বলিলেন, “আজ রাত্রে আহার করিয়া তুমি যখন শয়ন করিবে তখন বলিব ।” ব্রাহয়ণ বলিল, “আচ্ছা।” বলিয়া স্যাস্তের অপেক্ষায় প্রহর গনিতে লাগিল । এ দিকে রাজকন্যা সোনার পালকে একটি ধবধবে ফলের বিছানা পাতিলেন, ঘরে সোনার প্রদীপে সাগন্ধ তেল দিয়া বাতি জৱালাইলেন এবং চুলটি বধিয়া নীলাবরী কাপড়টি পরিয়া সাজিয়া বসিয়া প্রহর গনিতে লাগিলেন, কখন রাত্রি আসে। রাত্রে তাঁহার স্বামী কোনোমতে আহার শেষ করিযা শয়নগহে সোনার পালকে ফলের বিছানায় গিয়া শয়ন করিলেন। ভাবিতে লাগিলেন, "আজ শনিতে পাইব, এই সাতমহলা বাড়িতে যে সন্দেরটি থাকে সে আমার কে হয়। রাজকন্যা তাঁহার স্বামীর পাত্রে প্রসাদ খাইয়া ধীরে ধীরে শয়নগহে প্রবেশ করিলেন। আজ বহর দিন পরে প্রকাশ করিয়া বলিতে হইবে, সাতমহলা বাড়ির একমাত্র অধীশ্ববরণী আমি তোমার কে হই ।” বলিতে গিযা বিছানায় প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, ফলের মধ্যে সাপ ছিল, তাঁহার স্বামীকে কখন দংশন করিয়াছে। স্বামীর মৃতদেহখানি মলিন হইয়া সোনার পালকে পাপশয্যায় পড়িয়া আছে। আমার যেন বক্ষঃপন্দন হঠাৎ বন্ধ হইয়া গেল। আমি রন্ধস্বরে বিবর্ণমখে জিজ্ঞাসা করিলাম, “তার পরে কী হইল।” দিদিমা বলিতে লাগিলেন, তার পরে— কিন্তু সে কথায় আর কাজ কী। সে যে আরও অসম্ভব। গল্পের প্রধান নায়ক সপাঘাতে মারা গেল, তবুও তার পরে ? বালক তখন জানিত না, মাতুর পরেও একটা তার পরে থাকিতে পারে বটে, কিন্তু সে তার পরের উত্তর কোনো দিদিমার দিদিমাও দিতে পারে না। বিশ্বাসের বলে সাবিত্রী মাতুর অনাগমন করিয়াছিলেন। শিশরেও প্রবল বিশ্বাস। এইজন্য সে মৃত্যুর অঞ্চল ধরিয়া ফিরাইতে চায়, কিছুতেই মনে করিতে পারে না যে, তাহার মাস্টারবিহীন এক সন্ধ্যাবেলাকার এত সাধের গল্পটি হঠাৎ একটি সপাঘাতেই মারা গেল। কাজেই দিদিমাকে সেই মহাপরিণামের চিররাধ গহ হইতে গল্পটিকে আবার ফিরাইয়া আনিতে হয়। কিন্তু, এত সহজে সেটি সাধন করেন, এমন অনায়াসে— কেবল হয়তো একটা কলার ভেলায় ভাসাইয়া দিয়া গাটি-দই মন্ত পড়িয়া মাত্র—যে, সেই ঝাপ ঝাপ বষ্টির রাত্রে স্তিমিত প্রদীপে বালকের মনে মৃত্যুর মতি অত্যন্ত অকঠোর হইয়া আসে, তাহাকে এক রাত্রের সুখনিদ্রার চেয়ে বেশি মনে হয় না। গল্প যখন ফরাইয়া যায়, আরামে