পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাসিত ఫిbfషి না— এতবড়ো মহাপাপ আর নাই।’ ” ইত্যাদি। রামলোচন প্রথমে চন্দরাকে রক্ষা কারবার উদ্দেশে অনেকগলা গল্প বানাইয়া তুলিয়াছিল, কিন্তু যখন দেখিল চন্দরা নিজে বাকিয়া দড়িাইয়াছে তখন ভাবিল, ওরে বাপ রে, শেষকালে কি মিথ্যা সাক্ষ্যের দায়ে পড়িব । যেটুকু জানি সেইটুকু বলা ভালো।’ এই মনে করিয়া রামলোচন যাহা জানে তাহাই বলিল। বরঞ্চ তাহার চেয়েও কিছ বেশি বলিতে ছাড়িল না। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সেশনে চালান দিলেন। ইতিমধ্যে চাষবাস হাটবাজার হাসিকান্না পৃথিবীর সমস্ত কাজ চলিতে লাগিল। এবং পর পাব বৎসরের মতো নবীন ধান্যক্ষেত্রে শ্রাবণের অবিরল ব্যষ্টিধারা বৰিত হইতে লাগিল । পলিস আসামী এবং সাক্ষী লইয়া আদালতে হাজির। সম্মুখবতী মনসেফের কোটে বিস্তর লোক নিজ নিজ মোকদমার অপেক্ষায় বসিয়া আছে। রন্ধনশালার পশ্চাদ্বতী একটি ডোবার অংশবিভাগ লইয়া কলিকাতা হইতে এক উকিল আসিয়াছে এবং তদুপলক্ষে বাদীর পক্ষে উনচল্লিশজন সাক্ষী উপস্থিত আছে। কত শত লোক আপন আপন কড়াগন্ডা হিসাবের চুলচেরা মীমাংসা করিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া আসিয়াছে, জগতে আপাতত তদপেক্ষা গরতের আর-কিছুই উপস্থিত নাই এইরুপ তাহাদের ধারণা। ছিদাম বাতায়ন হইতে এই অত্যন্ত ব্যস্তসমস্ত প্রতিদিনের পৃথিবীর দিকে একদস্টে চাহিয়া আছে, সমস্তই সবনের মতো বোধ হইতেছে। কম্পাউণ্ডের বৃহৎ বটগাছ হইতে একটি কোকিল ডাকিতেছে— তাহাদের কোনোরপে আইন-আদালত নাই । চন্দরা জজের কাছে কহিল, “ওগো সাহেব, এক কথা আর বারবার কত বার করিয়া বলিব ।” জজসাহেব তাহাকে বঝাইয়া বলিলেন, “তুমি যে অপরাধ স্বীকার করিতেছ তাহার শাসিত কী জান : “ চন্দরা কহিল, “না।” জজসাহেব কহিলেন, “তাহার শাসিত ফাঁসি ।” চন্দরা কহিল, “ওগো, তোমার পায়ে পড়ি, তাই দাও-না, সাহেব । তোমাদের যাহা খুশি করো, আমার তো আর সহ্য হয় না।” যখন ছিদামকে আদালতে উপস্থিত করিল চন্দরা মুখ ফিরাইল। জজ কহিলেন, “সাক্ষীর দিকে চাহিয়া বলো, এ তোমার কে হয়।” চন্দরা দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া কহিল, “ও আমার স্বামী হয় ।” প্রশন হইল, “ও তোমাকে ভালোবাসে না ?” উত্তর । উঃ, ভারি ভালোবাসে । প্রশন। তুমি উহাকে ভালোবাস না ? উত্তর । খুব ভালোবাসি। ছিদামকে যখন প্রশন হইল ছিদাম কহিল, “আমি খন করিয়াছি।” প্রশন । কেন । ছিদাম । ভাত চাহিয়াছিলাম, বড়োবউ ভাত দেয় নাই।