পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミOど গল্পগুচ্ছ মন্ময়ী বিস্মিত হইয়া ব্যথিত হইয়া চাহিয়া রহিল। মাতৃগহে তাহার সেই পরাতন শয়নগহকে আর আপনার বলিয়া মনে হইল না, সেখানে ষে থাকিত সে হঠাৎ আর নাই। এখন হািদয়ের সমস্ত সমতি সেই আর-একটা বাড়ি, আর-একটা ঘর, আর-একটা শয্যার কাছে গনগন করিয়া বেড়াইতে লাগিল। মন্ময়ীকে আর কেহ বাহিরে দেখিতে পাইল না। তাহার হাস্যধৰনি আর শনা ষায় না। রাখাল তাহাকে দেখিলে ভয় করে । খেলার কথা মনেও আসে না । মন্ময়ী মাকে বলিল, “মা, আমাকে শ্বশুরবাড়ি রেখে আয় ।” এ দিকে, বিদায়কালীন পত্রের বিষন্ন মুখ সমরণ করিয়া অপবর মার হদয় বিদীণ হইয়া যায়। সে যে রাগ করিয়া বউকে বেহানের বাড়ি রাখিয়া আসিয়াছে ইহা তাঁহার মনে বড়োই বিধিতে লাগিল । হেনকালে একদিন মাথায় কাপড় দিয়া মন্ময়ী লানমন্খে শাশুড়ির পায়ের কাছে পড়িয়া প্রণাম করিল। শাশুড়ি তৎক্ষণাৎ ছলছলনেত্রে তাহাকে বক্ষে চাপিয়া ধরিলেন। মহেতের মধ্যে উভয়ের মিলন হইয়া গেল। শাশুড়ি বধর মুখের দিকে চাহিয়া আশ্চর্য হইয়া গেলেন। সে মন্ময়ী আর নাই। এমন পরিবতন সাধারণত সকলের সম্ভব নহে। বহৎ পরিবর্তনের জন্য বহং বলের আবশ্যক । শাশুড়ি সিথর করিয়াছিলেন, মন্মযাঁর দোষগুলি একটি একটি করিয়া সংশোধন করিবেন, কিন্তু আর-একজন অদশ্য সংশোধনকতা একটি অজ্ঞাত সংক্ষেপ উপায় অবলম্ববন করিয়া মন্ময়ীকে যেন নতন জন্ম পরিগ্রহ করাইয়া দিলেন । এখন শাশুড়িকেও মন্ময়ী বুঝিতে পাবিল, শাশুড়িও মন্ময়ীকে চিনিতে পারিলেন ; তরর সহিত শাখাপ্রশাখার যেরপে মিল, সমস্ত ঘরকন্না তেমনি পরপর অখণ্ডসম্মিলিত হইয়া গেল । এই যে একটি গভীর নিধ বিশাল রমণীপ্রকৃতি মন্ময়ীর সমস্ত শরীর ও সমস্ত অন্তরে রেখায় রেখায় ভরিয়া ভরিয়া উঠিল, ইহাতে তাহাকে যেন বেদনা দিতে লাগিল। প্রথম আষাঢ়ের শ্যামসজল নবমেঘের মতো তাহার হাদয়ে একটি অশ্রুপণে বিস্তীণ অভিমানের সঞ্চার হইল। সেই অভিমান তাহার চোখের ছায়াময় সদেীঘ" পল্লবের উপর আর-একটি গভীরতর ছায়া নিক্ষেপ করিল । সে মনে-মনে বলিতে লাগিল, আমি আমাকে বুঝিতে পারি নাই বলিয়া তুমি আমাকে বঝিলে না কেন। তুমি আমাকে শাসিত দিলে না কেন । তোমার ইচ্ছানুসারে আমাকে চালনা করাইলে ন্য কেন। আমি রাক্ষসী যখন তোমার সঙ্গে কলিকাতাস যাইতে চাহিলাম না, তুমি আমাকে জোর করিয়া ধরিয়া লইয়া গেলে না কেন। তুমি আমার কথা শুনিলে কেন, আমার অনুরোধ মানিলে কেন, আমার অবাধ্যতা সহিলে কেন । তাহার পর, অপব যেদিন প্রভাতে পকেরিণীতীরের নিজন পথে তাহাকে বন্দী করিয়া কিছু না বলিয়া একবার কেবল তাহার মাখের দিকে চাহিয়াছিল, সেই পাকরিণী, সেই পথ, সেই তরতল, সেই প্রভাতের রৌদ্র এবং সেই হাদয়ভারাবনত গভীর দটি তাহার মনে পড়িল এবং হঠাৎ সে তাহার সমস্ত অথ বঝিতে পারিল। তাহার পর সেই বিদায়ের দিনের যে চুম্ববন অপবর মাখের দিকে অগ্রসল হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছিল, সেই অসপাণ চুম্বন এখন মরমরীচিকাভিমুখী তষাত পাখির ন্যায় ক্ৰমাগত সেই অতীত অবসরের দিকে ধাবিত হইতে লাগিল, কিছুতেই তাহার