পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমস্যাপারণ ఫిసిసి বিপিনবিহারী উত্তরে লিখিলেন যে, ‘পবে যেমন দান করা যাইত তেমনি পাওনা নানা প্রকারের ছিল। তখন জমিদার এবং প্রজা উভয় পক্ষের মধ্যেই দান-প্রতিদান ছিল। সম্প্রতি নতেন নতেন আইন হইয়া ন্যায্য খাজনা ছাড়া অন্য পাঁচ রকম পাওনা একেবারে বন্ধ হইয়াছে এবং কেবলমাত্র খাজনা আদায় করা ছাড়া জমিদারের অন্যান্য গৌরবজনক অধিকারও উঠিয়া গিয়াছে— অতএব এখনকার দিনে যদি আমি আমার ন্যায্য পাওনার দিকে কঠিন দষ্টি না রাখি তবে আর থাকে কী। এখন প্রজাও আমাকে অতিরিক্ত কিছ দিবে না, আমিও তাহাকে অতিরিন্ত কিছ দিব না— এখন আমাদের মধ্যে কেবলমাত্র দেনাপাওনার সম্পক । দানখয়রাত করিতে গেলে ফতুর হইতে হইবে, বিষয়-রক্ষা এবং কুলসম্প্রম-রক্ষা করা দরহে হইয়া পড়িবে।’ কৃষ্ণগোপাল সময়ের এতাধিক পরিবতনে অত্যন্ত চিন্তিত হইয়া উঠিতেন এবং ভাবিতেন, এখনকার ছেলেরা এখনকার কালের উপযোগী কাজ করিতেছে, আমাদের সে কালের নিয়ম এখন খাটিবে না। আমি দরে বসিয়া ইহাতে হস্তক্ষেপ করিতে গেলে তাহারা বলিবে, তবে তোমার বিষয় তুমি ফিরিয়া লও, আমরা ইহা রাখিতে পারিব না। কাজ কী বাপ, এ কয়টা দিন কোনোমতে হরিনাম করিয়া কাটাইয়া দিতে পারিলে বাঁচি । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ এই ভাবে কাজ চলিতে লাগিল । অনেক মকদ্দমা-মামলা হাঙ্গামা-ফ্যাসাদ করিয়া বিপিনবিহারী সমস্তই প্রায় এক-প্রকার মনের মতো গছাইয়া লইলেন। অনেক প্রজাই ভয়ক্ৰমে বশ্যতা স্বীকার করিল, কেবল মিজাবিবির পত্র অছিমন্দি বিশ্বাস কিছুতেই বাগ মানিল না। বিপিনবিহারীর আক্ৰোশও তাহার উপরে সব চেয়ে বেশি। ব্রাহরণের ব্রহমন্ত্রর একটা আথ বোঝা যায়, কিন্তু এই মসলমান-সন্তান যে কী হিসাবে এতটা জমি নিকের ও স্বল্প করে উপভোগ করে বুঝা যায় না। একটা সামান্য যবন বিধবার ছেলে গ্রামের ছাত্রবত্তি স্কুলে দই ছত্র লিখিতে পড়িতে শিখিয়াছে, কিন্তু আপনার সৌভাগ্যগবেঃ সে যেন কাহাকেও গ্রাহ্য করে না । বিপিন পুরাতন কর্মচারীদের কাছে জানিতে পারিলেন, কতার আমল হইতে বাস্তলিক ইহারা বহুকাল অনুগ্রহ পাইয়া আসিতেছে। কিন্তু, এ অনগ্রহের কোনো বিশেষ কারণ তাহারা নিণয় করিতে পারে না। বোধ করি, অনাথা বিধবা নিজ দঃখ জানাইয়া কতার দয়া উদ্রেক করিয়াছিল। কিন্তু, বিপিনের নিকট এই অনুগ্রহ সবাপেক্ষা অষোগ্য বলিয়া প্রতিভাত হইল। বিশেষত ইহাদের পবেকার দরিদ্র অবস্থা বিপিন দেখেন নাই, এখন ইহাদের সচ্ছলতার বাড়াবাড়ি এবং অপষণপত দক্ষভ দেখিয়া বিপিনের মনে হইত, ইহারা যেন তাঁহার দয়াদাবাল সরল পিতাকে ঠকাইয়া তাঁহাদের বিষয়ের এক অংশ চুরি করিয়া লইয়াছে। অছিমন্দিও উদ্ধত প্রকৃতির যবেক। সে বলিল, “প্রাণ যাইবে তব আমার অধিকারের এক তিল ছাড়িয়া দিব না। উভয় পক্ষে ভারি যন্ধে বাধিয়া উঠিল। অছিমন্দির বিধবা মাতা ছেলেকে বার বার করিয়া বাবাইল, জমিদারের সহিত