পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ> ミ গল্পগুচ্ছ কাজিয়া করিয়া কাজ নাই, এত দিন যাঁহার অনগ্রহে জীবন কাটিল তাঁহার অনগ্রহের পরে নিভর করাই কতব্য—জমিদারের প্রাথ না-মত কিছল ছাড়িয়া দেওয়া যাক। অছিমন্দি কহিল, “মা, তুমি এ-সকল বিষয় কিছুই বোঝ না।” মকন্দমায় অছিমন্দি একে একে হারিতে আরম্ভ করিল। কিন্তু যতই হার হইতে লাগিল ততই তাহার জিদ বাড়িয়া উঠিল। তাহার সববের জন্য সে সব বই পণ করিয়া বসিল । মিজাবিবি একদিন বৈকালে বাগানেব তরিতরকারি কিঞ্চিৎ উপহার লইয়া গোপনে বিপিনবাবরে সহিত সাক্ষাৎ করিল। বন্ধা যেন তাহার সকরণ মাতৃদটির বারা সনেহে বিপিনের সবাঙ্গে হাত বলাইয়া কহিল, “তুমি আমার বাপ, আল্লা তোমার ভালো করন। বাবা, অছিমকে তুমি নষ্ট করিয়ে না, ইহাতে তোমার ধর্ম হইবে না। তাহাকে আমি তোমার হস্তেই সমপণ করিলাম— তাহাকে নিতান্তই অবশ্যপ্রতিপাল্য একটি অকমণ্য ছোটো ভাইয়ের মতো গ্রহণ করো— সে তোমার অসীম ঐশ্ববয্যের ক্ষুদ্র এক কণা পাইয়াছে বলিয়া ক্ষম হইয়ো না, বাপ ।” অধিক বয়সের স্বাভাবিক প্ৰগলভতা-বশত বাড়ি তাঁহার সহিত ঘরকা পাতাইতে আসিয়াছে দেখিয়া বিপিন ভারি বিরক্ত হইয়া উঠিল। কহিল, "তুমি মেয়েমানষে, এসমস্ত কথা বোঝ না। যদি কিছ জানাইবার থাকে তোমার ছেলেকে পাঠাইযা দিয়ো ।” মিজাবিবি নিজের ছেলে এবং পরের ছেলে উভয়ের কাছেই শুনিল, সে এ বিষয়ের কিছুই বোঝে না। আল্লার নাম সমবণ করিয়া চোখ মুছিতে মুছিতে বিধবা ঘরে ফিরিয়া গেল। তৃতীয় পরিচ্ছেদ মকদ্দমা ফৌজদারি হইতে দেওয়ানি, দেওয়ানি হইতে জেলা-আদালত, জেলা-আদালত হইতে হাইকোট পর্যন্ত চলিল। বংসর দেড়েক এমনি করিয়া কাটিয়া গেল ! আছিমন্দি যখন দেনার মধ্যে আকন্ঠ নিমগন হইয়াছে তখন আপিল-আদালতে তাহার আংশিক জয় সাব্যস্ত হইল। কিন্তু, ডাঙার বাঘের মুখ হইতে যেটুকু বাঁচিল জলের কুমির তাহার প্রতি আক্ৰমণ করিল। মহাজন সময় বুঝিয়া ডিক্ৰীজারি করিল। অছিমন্দির যথাসব সব নিলাম হইবার দিন সিথর হইল। সে দিন সোমবার, হাটের দিন। ছোটো একটা নদীর ধারে হাট। বর্ষাকালে নদী পরিপণ হইয়া উঠিয়াছে। কতক নৌকায় এবং কতক ডাঙায় কেনা বেচা চলিতেছে, কলরবের অন্ত নাই। পণ্যদ্রব্যের মধ্যে এই আষাঢ় মাসে কাঁঠালের আমদানিই সব চেয়ে বেশি, ইলিশ মাছও যথেষ্ট। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছে; অনেক বিক্রেতা বটির আশঙ্কায় বাঁশ পতিয়া তাহার উপর একটা কাপড় খাটাইয়া দিয়াছে। অছিমন্দিও হাট করিতে আসিয়াছে—কিন্তু, তাহার হাতে একটি পয়সাও নাই, এবং তাহাকে আজকাল কেহ ধারেও বিক্রয় করে না। সে একটি কাটারি এবং একটি পিতলের থালা হাতে করিয়া আসিয়াছে, বন্ধক রাখিয়া ধার করিবে । বিপিনবাব বিকালের দিকে হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন, সঙ্গে দুই-তিনজন