পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ>b গল্পগুচ্ছ বলে, যটি বলে, তাহা অনেক ভংসনার পর অনেক দিনে শিখিয়া লইতে হইবে। সে দিন সকালেও সানাই বাজিতেছিল। কিন্তু, সেই ঘোমটা এবং বেনারসি শাড়ি এবং অলংকারে মণ্ডিত ক্ষুদ্র বালিকার কম্পিত হদয়টকুর মধ্যে কী হইতেছিল তাহা ভালো করিয়া বোঝে এমন একজনও সেই লোকারণ্যের মধ্যে ছিল কি না সন্দেহ। ষশিও উমার সঙ্গে গেল। কিছ দিন থাকিয়া উমাকে শ্বশুরবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত করিয়া সে চলিয়া আসিবে এমনি কথা ছিল। স্নেহশীলা যশি অনেক বিবেচনা করিয়া উমার খাতাটি সঙ্গে লইয়া গিয়াছিল। এই খাতাটি তাহার পিতৃভবনের একটি অংশ; তাহার অতিক্ষণিক জন্মগহবাসের স্নেহময় সম্তিচিহ্ন; পিতামাতার অঙ্কস্থলীর একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, অত্যন্ত বাঁকাচোরা কাঁচা অক্ষরে লেখা। তাহার এই অকাল গহিণীপনার মধ্যে বালিকাস্বভাবরোচক একটুখানি স্নেহমধর স্বাধীনতার আসবাদ।

  • বশরেবাড়ি গিয়া প্রথম কিছ দিন সে কিছই লেখে নাই, সময়ও পায় নাই। অবশেষে কিছু দিন পরে যশি তাহার প্যবসথানে চলিয়া গেল।

সে দিন উমা দপারবেলা শয়নগহের বার রন্ধ করিয়া, টিনের বাক্স হইতে খাতাটি বাহির করিয়া, কাঁদিতে কাঁদিতে লিখিল— যশি বাড়ি চলে গেছে, আমিও মার কাছে যাব । আজকাল চারপাঠ এবং বোধোদয় হইতে কিছু কপি করিবার অবসর নাই, বোধ করি তেমন ইচ্ছাও নাই। সুতরাং আজকাল বালিকার সংক্ষিপ্ত রচনার মধ্যে মধ্যে দীঘ বিচ্ছেদ নাই। পবোদধত পদটির পরেই দেখা যায় লেখা আছে– দাদা যদি একবার বাড়ি নিয়ে যায় তা হলে দাদার লেখা আর কখনো খারাপ করে দেব না। শনা যায়, উমার পিতা উমাকে প্রায় মাঝে-মাঝে বাড়ি আনিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু, গোবিন্দলাল প্যারীমোহনের সঙ্গে যোগ দিয়া তাহার প্রতিবন্ধক হয়। গোবিন্দলাল বলে, এখন উমার পতিভক্তি-শিক্ষার সময়, এখন তাহাকে মাঝেমাঝে পতিগহ হইতে পরাতন পিতৃস্নেহের মধ্যে আনয়ন করিলে তাহার মনকে অনৰ্থক বিক্ষিপত করিয়া দেওয়া হয়। এই বিষযে সে উপদেশে বিদ্রপে জড়িত এমন সন্দের প্রবন্ধ লিখিয়াছিল যে, তাহার একমতবতী সকল পাঠকেই উক্ত রচনার অকাট্য সত্য সম্পণে স্বীকার না করিয়া থাকিতে পারে নাই। লোকমুখে সেই কথা শুনিয়াই উমা তাহার খাতায় লিখিয়াছিল— দাদা, তোমার দটি পায়ে পড়ি, আমাকে একবার তোমাদের ঘরে নিয়ে যাও, আমি তোমাকে আর কখনো রাগাব না । এক দিন উমা দ্বার রন্ধ করিয়া এমনি কী একটা অর্থহীন তুচ্ছ কথা খাতায় লিখিতেছিল। তাহার ননদ তিলকমঞ্জরীর অত্যন্ত কৌতুহল হইল, সে ভাবিল বউদিদি মাঝে-মাঝে দরজা বন্ধ করিয়া কী করে দেখিতে হইবে। বারের ছিদ্ৰ দিয়া দেখিল লিখিতেছে। দেখিয়া অবাক। তাহাদের অন্তঃপরে কখনোই সরস্বতীর এরপে গোপন সমাগম হয় নাই। তাহার ছোটাে কনকমঞ্জরী, সেও আসিয়া একবার উকি মারিয়া দেখিল। তাহার ছোটাে অনঙ্গমঞ্জরী, সেও পদাগলির উপর ভর দিয়া বহন কন্টে ছিদ্রপথ দিয়া রন্ধগহের রহস্য ভেদ করিয়া লইল ।