পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খাতা &సిపి উমা লিখিতে লিখিতে সহসা গহের বাহিরে তিনটি পরিচিত কণ্ঠের খিল খিল হাসি শনিতে পাইল। ব্যাপারটা বঝিতে পারিল, খাতাটি তাড়াতাড়ি বাক্সে বন্ধ করিয়া লন্জায় ভয়ে বিছানায় মুখ লুকাইয়া পড়িয়া রহিল। প্যারীমোহন এই সংবাদ অবগত হইয়া বিশেষ চিন্তিত হইল। পড়াশনা আরম্ভ হইলেই নভেল-নাটকের আমদানি হইবে এবং গহধম রক্ষা করা দায় হইয়া উঠিবে। তা ছাড়া, বিশেষ চিন্তা বারা এ বিষয়ে সে একটি অতি সক্ষম তত্ত্ব নির্ণয় করিয়াছিল। সে বলিত, সীশক্তি এবং পংেশন্তি উভয় শক্তির সম্মিলনে পবিত্র দাম্পত্যশক্তির উদ্ভব হয়; কিন্তু লেখাপড়া-শিক্ষার বারা যদি সতীশক্তি পরাভূত হইয়া একান্ত পংশক্তির প্রাদাভাব হয়, তবে পংেশক্তির সহিত পংেশক্তির প্রতিঘাতে এমন একটি প্ৰলয়শক্তির উৎপত্তি হয় যদুবারা দাপত্যশক্তি বিনাশশক্তির মধ্যে বিলীনসত্তা লাভ করে, সতরাং রমণী বিধবা হয়। এ পর্যন্ত এ তত্ত্বের কেহ প্রতিবাদ করিতে পারে नाशें । প্যারীমোহন সন্ধ্যাকালে ঘরে আসিয়া উমাকে যথেষ্ট ভৎসনা করিল এবং কিঞ্চিৎ উপহাসও করিল; বলিল, “শামলা কমাশ দিতে হইবে, গিন্নি কানে কলম গ:জিয়া আপিসে যাইবেন।” উমা ভালো বুঝিতে পারিল না। প্যারীমোহনের প্রবন্ধ সে কখনো পড়ে নাই, এইজন্য তাহার এখনও ততদুর রসবোধ জন্মে নাই। কিন্তু, সে মনে মনে একান্ত সংকুচিত হইয়া গেল; মনে হইল, পথিবী বিধা হইলে তবে সে লক্ষজা রক্ষা করিতে পারে । বহর দিন আর সে লেখে নাই। কিন্তু, একদিন শরৎকালের প্রভাতে একটি গায়িকা ভিখারিনি আগমনীর গান গাহিতেছিল। উমা জানালার গরাদের উপর মুখ রাখিয়া চুপ করিয়া শুনিতেছিল। একে শরৎকালের রৌদ্রে ছেলেবেলাকার সকল কথা মনে পড়ে, তাহার উপরে আগমনীর গান শনিয়া সে আর থাকিতে পারিল না। উমা গান গাহিতে পারিত না; কিন্তু লিখিতে শিখিয়া অবধি এমনি তাহার অভ্যাস হইয়াছে যে, একটা গান শুনিলেই সেটা লিখিয়া লইয়া গান গাহিতে না পারার খেদ মিটাইত। আজ কাঙালি গাহিতেছিল— পরবাসী বলে, উমার মা, তোর হারা তারা এল ওই। শনে পাগলিনীপ্রায় অমনি রানী ধায়— কই উমা, বলি, কই । কে’দে রানী বলে, আমার উমা এলে— একবার আয় মা, একবার আয় মা, একবার আয় মা, করি কোলে। অমনি দ বাহ পসারি, মায়ের গলা ধরি অভিমানে কাঁদ রানীরে বলে— কই মেয়ে বলে আনতে গিয়েছিলে। অভিমানে উমার হদয় পাশ হইয়া চোখে জল ভরিয়া গেল। গোপনে গায়িকাকে