পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミミO গল্পগুচ্ছ ডাকিয়া গহবার রাধ করিয়া বিচিত্র বানানে এই গানটি খাতায় লিখিতে আরম্ভ করিল। তিলকমঞ্জরী, কনকমঞ্জরী এবং অনঙ্গমঞ্জরী সেই ছিদ্ৰযোগে সমস্ত দেখিল এবং সহসা করতালি দিয়া বলিয়া উঠিল, “বউদিদি, কী করছ আমরা সমস্ত দেখেছি।" তখন উমা তাড়াতাড়ি বার খালিয়া বাহির হইয়া কাতরস্বরে বলিতে লাগিল, "লক্ষী ভাই, কাউকে বলিস নে ভাই, তোদের দুটি পায়ে পড়ি ভাই— আমি আর করব না, আমি আর লিখব না।" অবশেষে উমা দেখিল, তিলকমঞ্জরী তাহার খাতাটির প্রতি লক্ষ করিতেছে। তখন সে ছটিয়া গিয়া খাতাটি বক্ষে চাপিয়া ধরিল। ননদীরা অনেক বলপ্রয়োগ করিয়া সেটি কাড়িয়া লইবার চেষ্টা করিল ; কৃতকায না হইয়া, অনঙ্গ দাদাকে ডাকিয়া उठानिळा । প্যারীমোহন আসিয়া গম্ভীরভাবে খাটে বসিল । মেঘমন্দ্রস্বরে বলিল, “খাতা দাও।” আদেশ পালন হইল না দেখিয়া আরও দই-এক সরে গলা নামাইয়া কহিল, “দাও।” বালিকা খাতাটি বক্ষে ধরিয়া একান্ত অননয়দটিতে স্বামীর মুখের দিকে চাহিল। যখন দেখিল, প্যারীমোহন খাতা কাড়িয়া লইবার জন্য উঠিয়াছে তখন সেটা মাটিতে ফেলিয়া দিয়া দই বাহতে মুখ ঢাকিয়া ভূমিতে লুণ্ঠিত হইয়া পড়িল । প্যারীমোহন খাতাটি লইয়া বালিকার লেখাগুলি উচ্চৈঃস্বরে পড়িতে লাগিল; শুনিয়া উমা পথিবীকে উত্তরোত্তর গাঢ়তর আলিঙ্গনে বন্ধ করিতে লাগিল ; এবং অপর তিনটি বালিকা-শ্রোতা খিল খিল করিয়া হাসিয়া অস্থির হইল। সেই হইতে উমা আর সে খাতা পায নাই । প্যারীমোহনেরও সক্ষমতত্ত্বকণ্টকিত বিবিধপ্রবন্ধপাণ একখানি খাতা ছিল, কিন্তু সেটি কাড়িয়া লইয়া ধবংস করে এমন মানবহিতৈষী কেহ ছিল না।