পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেঘ ও রোঁদ ミs> ছোটো বসিবার ঘরটিতে যবেক একাকী তন্তপোষের উপর পাস্তকে পরিবত হইয়া বসিয়া থাকিত। গিরিবালা গরাদে ধরিয়া বাহিরে দাঁড়াইয়া অবাক হইয়া এই নতপষ্ঠ পাঠনিবিষ্ট অস্তুত লোকটিকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিত, পশতকের সংখ্যা তুলনা করিয়া মনে মনে স্থির করিত, শশিভূষণ তাহার ভাইদের অপেক্ষা অনেক বেশি বিম্ববান। তদপেক্ষা বিস্ময়জনক ব্যাপার তাহার নিকট আর কিছই ছিল না। কথামালা প্রভৃতি পথিবীর প্রধান প্রধান পাঠ্যপুস্তকগুলি শশিভূষণ যে নিঃশেষপবেক পাঠ করিয়া ফেলিয়াছে, এ বিষয়ে তাহার সন্দেহমাত্র ছিল না। এইজন্য, শশিভূষণ যখন পশতকের পাত উলটাইত সে স্থিরভাবে দাঁড়াইয়া তাহার জ্ঞানের অবধি নির্ণয় করিতে পারিত না । অবশেষে এই বিস্ময়মন বালিকাটি ক্ষীণদৃষ্টি শশিভূষণেরও মনোযোগ আকর্ষণ করিল। শশিভূষণ একদিন একটা ঝকঝকে বাঁধানো বই খালিয়া বলিল, “গিরিবালা, ছবি দেখবি আয় ।” গিরিবালা তৎক্ষণাং দৌড়িয়া পলাইয়া গেল। কিন্তু পরদিন সে পনবার ডুরে কাপড় পরিয়া সেই গরাদের বাহিরে দাঁড়াইয়া সেইর,প গম্ভীর মৌন মনোযোগের সহিত শশিভূষণের অধ্যয়নকাব নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিল। শশিভূষণ সেদিনও ডাকিল এবং সেদিনও সে বেশী দলাইয়া উধনীশবসে ছটিয়া পলাইল । এইরুপে তাহদের পরিচয়ের সত্রপাত হইয়া ক্ৰমে কখন ঘনিষ্ঠতর হইয়া উঠিল এবং কখন যে বালিকা গরাদের বাহির হইতে শশিভূষণের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল তাহার তত্ত্বপোষের উপর বাঁধানে পন্তেকতাপের মধ্যে পথান পাইল ঠিক সে তারিখটা নির্ণয় করিয়া দিতে ঐতিহাসিক গবেষণার আবশ্যক । শশিভূষণের নিকট গিরিবালার লেখাপড়ার চচা আরম্ভ হইল। শনিয়া সকলে ং সিবেন, এই মস্টারটি তাহার ক্ষুদ্র ছাত্রীকে কেবল যে অক্ষর বানান এবং ব্যাকরণ শিখাইত তাহা নহে– অনেক বড়ো বড়ো কাব্য তজমা করিয়া শনাইত এবং তাহার মতামত জিজ্ঞাসা করিত। বালিকা কী ব্যকিত তাহা অন্তবর্ণমাই জানেন, কিন্তু তাহার ভালো লাগিত ত্যহাতে সন্দেহ নাই । সে বোঝা না-বোঝায় মিশাইয়া আপন লালাহুদয়ে নানা অপরপ কল্পনাচিল অকিয়া লইত। নীরবে চক্ষ বিসফারিত করিয়া মন দিয়া শনিত, মাঝে মাঝে এক-একট অত্যন্ত অসংগত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিত এবং কখনো কখনো অকস্মাং একটা অসংলগ্ন প্রসঙ্গাতরে গিয়া উপনীত হইত। শশিভূষণ তাহাতে কখনো কিছর বাধা দিত ন- বড়ো বড়ো কাব্য সম্বন্ধে এই অতিক্ষয় সমালোচকের নিন্দ প্রশংসা টীকা ভাষা শনিয়া সে বিশেষ আনন্দ লাভ করিত। সমস্ত পল্লীর মধ্যে এই গিরিবালাই তাহার একমাত্র সমজদার বন্ধ । গিরিবালার সহিত শশিভূষণের প্রথম পরিচয় যখন, তখন গিরির বয়স আট ছিল, এখন তাহার বয়স দশ হইয়াছে। এই দুই বৎসরে সে ইংরাজি ও বাংলা বর্ণমালা শিখিয়া দুই-চারিট সহজ বই পড়িয়া ফেলিয়াছে। এবং শশিভূষণের পক্ষেও পল্লীগ্রাম এই দুই বৎসর নিতান্ত সঙ্গবিহীন বিরস বলিয়া বোধ হয় নাই।