পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩২ গল্পগুচ্ছ মতো একজন লোক গ্রামে থাকিলে আমাদের সাহস কত থাকে। যাহা হউক আমাকে এই ঘোর অপমান হইতে উদ্ধার করিতে হইবে।” চতুথ পরিচ্ছেদ যে শশিভূষণ চিরকাল লোকচক্ষর অন্তরালে নিভৃত নিজনতার মধ্যে আপনাকে রক্ষা করিবার চেষ্টা করিয়া আসিয়াছেন তিনি আজ আদালতে আসিয়া হাজির হইলেন। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁহার নালিশ শনিয়া তাঁহাকে প্রাইভেট কামরার মধ্যে ডাকিয়া লইয়া অত্যন্ত খাতির করিয়া কহিলেন, “শশীবাব, এ মকদ্দমাটা গোপনে মিটমাট করিয়া ফেলিলে ভালো হয় না কি।” শশীবাব টেবিলের উপরিসিথত একখানি আইন গ্রন্থের মলাটের উপর তাঁহার কুশ্চিতভ্র ক্ষীণ দটি অত্যন্ত নিবিষ্টভাবে রক্ষা করিয়া কহিলেন, “আমার মক্কেলকে আমি এরুপ পরামর্শ দিতে পারি না। তিনি প্রকাশ্যভাবে অপমানিত হইয়াছেন, গোপনে ইহার মিটমাট হইবে কী করিয়া।” সাহেব দইচারি কথা কহিয়া বুঝিলেন, এই বলপভাষী সব পদটি লোকটিকে সহজে বিচলিত করা সম্ভব নহে, কহিলেন, “অলরাইট বাব দেখা যাউক কত দর কী হয়।” এই বলিয়া ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব মকদ্দমার দিন ফিরাইয়া দিয়া মফঃস্বলভ্রমণে বাহির হইলেন। এদিকে জয়েণ্ট সাহেব জমিদারকে পত্র লিখিলেন, “তোমার নায়েব আমার ভৃত্যদিগকে অপমান করিয়া আমার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে, আশা করি, তুমি ইহার সমুচিত প্রতিকার করিবে ।” জমিদার শশব্যস্ত হইয়া তৎক্ষণাৎ হরকুমারকে তলব করিলেন। নায়েব আদ্যোপাত সমস্ত ঘটনা খলিয়া বলিলেন। জমিদার অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “সাহেবের মেথর যখন চারি সের ঘি চাহিল তুমি বিনা বাক্যব্যয়ে তৎক্ষণাৎ কেন দিলে না। তোমার কি বাপের কড়ি লাগিত।” হরকুমার অস্বীকার করিতে পারলেন না যে, ইহাতে তাঁহার পৈতৃক সম্পত্তির কোনোরাপ ক্ষতি হইত না। অপরাধ স্বীকার করিয়া কহিলেন, “আমার গ্রহ মন্দ তাই এমন দর্যবধি ঘটিয়াছিল।” হরকুমার কহিলেন, “ধমাবতার, নালিশ করিবার ইচ্ছা আমার ছিল না। ঐ আমাদের গ্রামের শশী, তাহার কোথাও কোনো মকদ্দমা জোটে না, সে ছোঁড়া নিতান্ত জোর করিয়া প্রায় আমার সম্মতি না লইয়াই এই হাঙ্গামা বাধাইয়া বসিয়াছে।” শনিয়া জমিদার শশিভূষণের উপর অত্যন্ত কন্ধ হইয়া উঠিলেন। বঝিলেন, লোকটা অপদাৰ্থ নব্য উকিল, কোনো ছতার একটা হজক তুলিয়া সাধারণের সমক্ষে পরিচিত হইবার চেষ্টায় আছে। নায়েবকে হকুম করিয়া দিলেন, মকদ্দমা তুলিয়া লইয়া যেন অবিলবে ছোটাে বড়ো ম্যাজিস্টেট বাগলকে ঠাণ্ডা করা হয়।