পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেঘ ও রৌদ্র ミ○○ নায়েব সাহেবের জন্য কিঞ্চিং ফলমলে শীতলভোগ উপহার লইয়া জয়েণ্ট ম্যাজিস্টেটের বাসায় গিয়া হাজির হইলেন। সাহেবকে জানাইলেন, সাহেবের নামে মকন্দমা করা তাঁহার আদৌ স্বভাববিরদ্ধে; কেবল শশিভূষণ নামে গ্রামের একটি অজাতশমশ্র অপোগণ্ড অবাচীন উকিল তাঁহাকে একপ্রকার না জানাইয়া এইরুপ পধার কাজ করিয়াছে। সাহেব শশিভূষণের প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত এবং নায়েবের প্রতি বড়ো সন্তুষ্ট হইলেন, রাগের মাথায় নায়েব-বাবকে 'ডণ্ডবিঢ়ান করিয়া তিনি ডুঃখিটা আছেন। সাহেব বাংলা ভাষার পরীক্ষায় সম্প্রতি পুরস্কার লাভ করিয়া সাধারণের সহিত সাধভাষায় বাক্যালাপ করিয়া থাকেন। নায়েব কহিলেন, মা-বাপ কখনো বা রাগ করিয়া শাস্তিও দিয়া থাকেন, কখনো বা আদর করিয়া কোলেও টানিয়া লন, ইহাতে সন্তানের বা মা-বাপের দুঃখের কোনো কারণ নাই । অতঃপর জয়েন্ট সাহেবের ভূতাবগ'কে যথাযোগ্য পারিতোষিক দিয়া হরকুমার মফঃস্বলে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সহিত দেখা করিতে গেলেন। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁহার মাথে শশিভূষণের পধার কথা শুনিয়া কহিলেন, “আমিও আশ্চর্য হইতেছিলাম যে, নায়েববাবকে বরাবর ভালো লোক বলিয়াই জানিতাম, তিনি যে সবাগ্রে আমাকে জানাইয়া গোপনে মিটমাট না করিয়া হঠাৎ মকদ্দমা আনিবেন, এ কী অসম্ভব ব্যাপার! এখন সমস্ত বুঝিতে পারিতেছি।” অবশেষে নায়েলকে জিজ্ঞাসা করিলেন, শশী কনগ্রেসে যোগ দিয়াছে কি না। নায়েব অম্বলানমথে বলিলেন, হাঁ । সাহেব তাঁহার সাহেবি বধিতে পষ্টই বকিতে পারলেন, এ সমস্তই কনগ্রেসের চলি । একটা পাকচক্ৰ বধাইয়া অমতবাজারে প্রবন্ধ লিখিয়া গবমে'প্টের সহিত খিটিমিটি করিবার জন্য কনগ্রেসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চেলাগণ লক্কোয়িতভাবে চতুদিকে অবসর অনুসন্ধান করিতেছে । এই-সকল ক্ষুদ্র কণ্টকগণকে একদমে দলন করিয়া ফেলিবার জন্য ম্যাজিস্টেটের হস্তে অধিকতর সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয় নাই বলিয়া সাহেব ভারতবষীয় গবমে'ণ্টকে অত্যন্ত দলবল গবমেণ্ট বলিয়া মনে মনে ধিক্কার দিলেন। কিন্তু কনগ্রেসওয়ালা শশিভূষণের নাম ম্যাজিস্ট্রেটের মনে রহিল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ সংসারে বড়ো বড়ো ব্যাপারগুলি যখন প্রবলভাবে গজাইয়া উঠিতে থাকে তখন ছোটো ছোটো ব্যাপারগুলিও ক্ষধিত ক্ষুদ্র শিকড়জাল লইয়া জগতের উপর আপন দাবি বিস্তার করিতে ছাড়ে না। শশিভূষণ যখন এই ম্যাজিস্টেটের হাঙ্গামা লইয়া বিশেষ ব্যস্ত, যখন বিস্তৃত পথিপত্র হইতে আইন উদ্ধার করিতেছেন, মনে মনে বস্তৃতায় শাণ দিতেছেন, কল্পনার সাক্ষীকে জেরা করিতে বসিয়া গিয়াছেন ও প্রকাশ্য আদালতের লোকারপ্যদশা এবং যন্ধপবের ভাব পৰাধ্যায়গালি মনে আনিয়া ক্ষণে ক্ষণে কম্পিত ও ঘমাপ্ত হইয়া উঠিতেছেন, তখন তাঁহার ক্ষুদ্র ছাত্রীটি তাহার ছিন্নপ্রায় চারপাঠ ও মসীবিচিত্র লিখিবার খাতা, বাগান হইতে কখনো ফল, কখনো ফল, মাতৃভাণ্ডার হইতে কোনোদিন