পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*○げ গল্পগুচ্ছ ছিল। যাত্রীদের মধ্যে শশিভূষণের গ্রাম হইতে কেহ কেহ উঠিয়ছিল। একটি মহাজনের নৌকা কিছদর হইতে এই স্টিমারের সহিত পালা দিয়া আসতে চেষ্টা করিতেছিল, আবার মাঝে মাঝে ধরি-ধরি করিতেছিল, আবার মাঝে মাঝে পশ্চাতে পড়িতেছিল। মাঝির ক্রমশ রেখ চাপিয়া গেল। সে প্রথম পালের উপর দ্বিতীয় পাল এবং দ্বিতীয় পালের উপরে ক্ষুদ্র তৃতীয় পালটা পর্যন্ত তুলিয়৷ দিল । বাতাসের বেগে সদীঘ মাস্তুল সম্মখে আনত হইয়া পড়িল, এবং বিদীণ তরঙ্গরাশি অটুকলম্বরে নৌকার দই পাবে উন্মত্তভাবে নত্য করিতে লাগিল। নৌকা তখন ছিন্নবলগা অশেবর ন্যায় ছটিয়া চলিল। এক পথানে স্টিমারের পথ কিঞ্চিৎ বাঁকা ছিল, সেইখানে সংক্ষিপ্ততর পথ অবলম্বন করিয়া নৌকা স্টিমারকে ছাড়াইয়া গেল। ম্যানেজার সাহেব আগ্রহের ভরে রেলের উপর ঝ:কিয়া নৌকার এই প্রতিযোগিতা দেখিতেছিল। যখন নৌকা তাহার পণতম বেগ প্রাপ্ত হইয়াছে এবং স্টিমারকে হত-দীয়েক ছাড়াইয়া গিয়াছে এমন সময় সাহেব হঠাৎ একটা বন্দক তুলিয়া সফাঁত পাল লক্ষ্য করিয়া আওয়াজ করিয়। দিল । এক মহতে পাল ফাটিয়া গেল, নৌকা ডুবিযা গেল, স্টিমার নদীর বাঁকের অন্তরালে অদশ্য হইয়া গেল। ম্যানেজার কেন যে এমন করিল তাহ বলা কঠিন । ইংরাজনন্দনের মনের ভ:ব আমরা বাঙালি হইয়া ঠিক বুঝিতে পারি না। হয়তো দিশি পালের প্রতিযোগিতা সে সহ্য করিতে পারে নাই, হয়তো একটা সফীত বিস্তীর্ণ পদাৰ্থ বন্দকের গুলির বর চক্ষের পলকে বিদীর্ণ করিবার একটা হিংস্র প্রলোভন আছে, হয়তো এই গবি'ত নৌকাটার বস্ত্রখণ্ডের মধ্যে গুটিকয়েক ফটো করিয়া নিমেষের মধ্যে ইহার নৌকালীল। সমাপ্ত করিয়া দিবার মধ্যে একটা প্রবল পৈশাচিক হাস্যরস আছে ; নিশচম জানি না । কিন্তু ইহা নিশ্চয়, ইংরাজের মনের ভিতরে একটুখানি বিশ্বাস ছিল যে, এই রসিকতাটকু করার দরন সে কোনোরপে শাসিতর দাযিক নহে— এবং ধারণা ছিল, ষাহাদের নৌকা গেল এবং সম্ভবত প্রাণসংশয়, তাহারা মানুষের মধ্যেই গণ্য হইতে পারে মা । সাহেব যখন বন্দক তুলিয়া গলি করিল এবং নৌকা ডুবিয়া গেল তখন শশিভূষণের পালিস ঘটনাস্থলের নিকটবতী হইয়াছে। শেষোক্ত ব্যাপারটি শশিভূষণ প্রত্যক্ষ দেখিতে পাইলেন। তাড়াতাড়ি নৌকা লইয়া গিয়া মাঝি এবং মাল্লাদিগকে উদ্ধার করিলেন । কেবল এক ব্যক্তি ভিতরে বসিয়া রন্ধনের জন্য মশলা পিষিতেছিল, তাহাকে আর দেখা গেল না। বর্ষার নদী খরবেগে বহিয়া চলিল । শশিভূষণের হৎপিণ্ডের মধ্যে উত্তপ্ত রক্ত ফটিতে লাগিল। আইন অত্যন্ত মন্দগতি—সে একটা বহৎ জটিল লৌহষন্ত্রের মতো, তৌল করিয়া সে প্রমাণ গ্রহণ করে এবং নিবিকারভাবে সে শাসিত বিভাগ করিয়া দেয়, তাহার মধ্যে মানবহৃদয়ের উত্তাপ নাই। কিন্তু ক্ষুধার সহিত ভোজন, ইচ্ছার সহিত উপভোগ ও রোষের সহিত শান্তিকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেওয়া শশিভূষণের নিকট সমান অস্বাভাবিক বলিয়া বোধ হইল। অনেক অপরাধ আছে যাহা প্রত্যক্ষ করিবামাত্র তৎক্ষণাৎ নিক্ত হস্তে তাহার শাঙ্গিত বিধান না করিলে অন্তযামী বিধাতাপর্ষ যেন অন্তরের মধ্যে থাকিয়া প্রত্যক্ষকারীকে দগধ করিতে থাকেন। তখন আইনের কথা স্মরণ করিয়া সান লাভ করিতে হাদয় লন্জা ৰোধ করে। কিন্তু কলের আইন এবং কলের জাহাজ ম্যানেজারটিকে শশিভূষণের নিকট হইতে দরে লইয়া গেল। তাহাতে জগতের আর আর কী উপকার হইয়াছিল বলিতে