পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8 ર গল্পগুচ্ছ নবম পরিচ্ছেদ শশিভূষণের বাপ উকিল ব্যারিস্টার লাগাইয়া প্রথমত শশীকে হাজত হইতে জামিনে খালাস করিলেন। তাহার পরে মকদ্দমার জোগাড় চলিতে লাগিল। যে-সকল জেলের জাল নষ্ট হইয়াছে তাহারা শশিভূষণের এক পরগনার অন্তগত, এক জমিদারের অধীন। বিপদের সময় কখনো কখনো শশীর নিকটে তাহারা আইনের পরামর্শ লইতেও আসিত। যাহাদিগকে সাহেব বোটে ধরিয়া আনিয়াছিলেন তাহারাও শশিভূষণের অপরিচিত নহে। শশী তাহাদিগকে সাক্ষী মানিবেন বলিয়া ডাকাইয়া আনিলেন। তাহারা ভয়ে অস্থির হইয়া উঠিল। সত্ৰীপত্র পরিবার লইয়া যাহাদিগকে সংসারযাত্রা নিবাহ করিতে হয় পলিসের সহিত বিবাদ করিলে তাহারা কোথায় গিয়া নিকুতি পাইবে। একটার অধিক প্রাণ কাহার শরীরে আছে। যাহা লোকসান হইবার তাহা তো হইয়াছে, এখন আবার সাক্ষীর সপিনা ধরাইয়া এ কী মশকিল ! সকলে বলিল, “ঠাকুর, তুমি তো আমাদিগকে বিষম ফ্যাসাদে ফেলিলে!” বিস্তর বলা-কহার পর তাহারা সত্যকথা বলিতে স্বীকার করিল। ইতিমধ্যে হরকুমার যেদিন বেঞ্চে কমোপলক্ষে জেলার সাহেবদিগকে সেলাম করিতে গেলেন পলিস-সাহেব হাসিয়া কহিলেন, “নায়েববাব, শনিতেছি তোমার প্রজারা পলিসের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত হইয়াছে।” নায়েব সচকিত হইয়া কহিলেন, “হাঁ! এও কি কখনো সম্ভব হয়। অপবিত্ৰজন্তুজাত পত্রদিগের অসিথতে এত ক্ষমতা !” সংবাদপত্র-পাঠকেরা অবগত আছেন, মকদ্দমায় শশিভূষণের পক্ষ কিছতেই টি-কিতে পারিল না। জেলেরা একে একে আসিয়া কহিল, পলিস-সাহেব তাহদের জাল কাটিয়া দেন নাই, বোটে ডাকিয়া তাহাদের নাম ধাম লিখিয়া লইতেছিলেন। কেবল তাহাই নহে, তাঁহার দেশপথ গুটিচারেক পরিচিত লোক সাক্ষা দিল যে, তাহারা সে সময়ে ঘটনাস্থলে বিবাহের বরযাত্র উপলক্ষে উপস্থিত ছিল। শশিভূষণ যে অকারণে অগ্রসর হইয়া পলিসের পাহারাওয়ালাদের প্রতি উপদ্রব করিয়াছে, তাহা তাহারা প্রত্যক্ষ দেখিয়াছে। শশিভূষণ স্বীকার করিলেন যে, গালি খাইয়া বোটের মধ্যে প্রবেশ করিয়া তিনি সাহেবকে মারিয়াছেন। কিন্তু জাল কাটিয়া দেওয়া ও জেলেদের প্রতি উপদ্ৰবই তাহার মলে কারণ। این এরপে অবস্থায় যে বিচারে শশিভূষণ শাসিত পাইলেন, তাহাকে অন্যায় বলা যাইতে পারে না। তবে শাসিতটা কিচ্চ গুরতর হইল। তিন-চারিটা অভিযোগ-- বিরুদ্ধে পরা প্রমাণ হইল। , শশিভূষণ তাঁহার সেই ক্ষুদ্র গহে তাঁহার প্রিয় পাঠাগ্রন্থগুলি ফেলিয়া পাঁচ বৎসর জেল খাটিতে গেলেন। তাঁহার বাপ আপিল করিতে উদ্যত হইলে শশিভূষণ বারবার নিষেধ করিলেন: কহিলেন, “জেন্স ভালো। লোহার বেড়ি মিথ্যা কথা বলে