পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२88 গল্পগুচ্ছ গাড়ি অগ্রসর হইয়া চলিল, গানের পদ ক্ৰমে দর হইতে দরতর হইয়া কানে প্রবেশ করিতে লাগিল— ওগো নিষ্ঠর, ফিরে এসো হে! আমার করণ কোমল, এসো ! ওগো সজলজলদনিধকান্ত সন্দের, ফিরে এসে ! গানের কথা ক্ৰমে ক্ষীণতর অসফটতর হইয়া আসিল, আর বঝো গেল না। কিন্তু গানের ছন্দে শশিভূষণের হৃদয়ে একটা আন্দোলন তুলিয়া দিল, তিনি আপন মনে গনগন করিয়া, পদের পর পদ রচনা করিয়া যোজনা করিয়া চলিলেন, কিছতে যেন থামিতে পারিলেন না— আমার নিতি-সুখ, ফিরে এসো! আমার চিরদখ, ফিরে এসো ! আমার সব-সুখ-দুখ-মন্থন-ধন, অন্তরে ফিরে এসে । আমার চিরবাঞ্ছিত, এসো ! আমার চিতসঞ্চিত, এসে ! ওহে চঞ্চল, হে চিরন্তন, ভুজ -বন্ধনে ফিরে এসো : আমার বক্ষে ফিরিয়া এসো, আমার চক্ষে ফিরিয়া এসো, আমার শয়নে স্বপনে বসনে ভূষণে নিখিল ভুবনে এসো! আমার মুখের হাসিতে এসো হে আমার চোখের সলিলে এসো · আমার আদরে, আমার ছলনে আমার অভিমানে ফিরে এসো · আমার সবসমরণে এসে আমার সবfভরমে এসো— আমার ধরম করম সোহাগ শরম জনম মরণে এসে ! গাড়ি যখন একটি প্রাচীরবেষ্টিত উদ্যানের মধ্যে প্রবেশ করিয়া একটি দ্বিতল অট্টালিকার সম্মুখে থামিল তখন শশিভূষণের গান থামিল। তিনি কোনো প্রশন না করিয়া ভূত্যের নির্দেশক্ৰমে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করিলেন। যে ঘরে আসিয়া বসিলেন, সে ঘরের চারি দিকেই বড়ো বড়ো কাচের আলমারিতে বিচিত্র বর্ণের বিচিত্ৰ মলাটের সারি সারি বই সাজানো। সেই দশা দেখিবমাত্র তাঁহার পরাতন জীবন দ্বিতীয়বার কারামন্ত হইয়া বাহির হইল। এই সোনার জলে অঙ্কিত, নানা বণে রঞ্জিত বইগুলি আনন্দলোকের মধ্যে প্রবেশ করিবার সুপরিচিত রত্নখচিত সিংহদ্বারের মতো তাঁহার নিকটে প্রতিভাত হইল। * # টেবিলের উপরেও কী কতকগলি ছিল। শশিভূষণ তাঁহার ক্ষীণদৃষ্টি লইয়া ঋকিয়া পড়িয়া দেখিলেন, একখানি বিদীণ লেট, তাহার উপরে গুটিকয়েক পরাতন খাতা, একখানি ছিন্নপ্রায় ধারাপাত, কথামালা এবং একখানি কাশীরামদাসের মহাভারত। সেলটের কাঠের ফ্লেমের উপর শশিভূষণের হস্তাক্ষরে কালি দিয়া খাব মোটা করিয়া