পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& 8Ꮼ গল্পগুচ্ছ প্রথম পরিচ্ছেদ সবগ ও মতের মাঝখানে একটা অনিদেশ্য অরাজক স্থান আছে যেখানে ত্রিশঙ্কু রাজ। ভাসিয়া বেড়াইতেছেন, যেখানে আকাশকুসুমের অজস্র আবাদ হইয়া থাকে। সেই বায়দগবেষ্টিত মহাদেশের নাম হইলে-হইতে-পারিত। যাহারা মহৎ কায করিয়া অমরতা লাভ করিয়াছেন তাঁহারা ধন্য হইয়াছেন, যাঁহারা সামান্য ক্ষমতা লইয়া সাধারণ মানবের মধ্যে সাধারণভাবে সংসারের প্রাত্যহিক কতব্যসাধনে সহায়তা করিতেছেন তাহারাও ধন্য; কিন্তু যাহারা অদস্টের ভ্রমকমে হঠাৎ দুয়ের মাঝখানে পড়িয়াছেন তাঁহাদের আর কোনো উপায় নাই। তাঁহারা একটা-কিছয় হইলে হইতে পারিতেন কিন্তু সেই কারণেই তাঁহাদের পক্ষে কিছ-একটা হওয়া সবাপেক্ষা অসম্ভব। আমাদের অনাথবন্ধ সেই মধ্যদেশবিলম্বিত বিধিবিড়ম্বিত যবেক । সকলেরই বিশ্বাস, তিনি ইচ্ছা করিলে সকল বিষয়েই কৃতকাষ হইতে পারিতেন। কিন্তু কোনো কালে তিনি ইচ্ছাও করিলেন না এবং কোনো বিষয়ে তিনি কুতকায"ও হইলেন না, এবং সকলের বিশ্বাস তাঁহার প্রতি অটল রহিয়া গেল। সকলে বলিল, তিনি পরীক্ষায় ফারস্ট হইবেন : তিনি আর পরীক্ষা দিলেন না। সকলের বিশ্বাস চাকরিতে প্রবিষ্ট হইলে যে কোনো ডিপারটমেন্টের উচ্চতম স্থান তিনি অনায়াসে গ্রহণ করিতে পারিবেন; তিনি কোনো চাকরিই গ্রহণ করিলেন না। সাধারণ লোকের প্রতি তাঁহার বিশেষ অবজ্ঞা, কারণ তাহারা অত্যন্ত সামান্য : অসাধারণ লোকের প্রতি তাঁহার কিছমাত্র শ্রদ্ধা ছিল না, কারণ মনে করিলেই তিনি তাহাদের অপেক্ষা অসাধারণতর হইতে পারিতেন। অনাথবন্ধর সমস্ত খ্যাতিপ্রতিপত্তি সুখসম্পদসৌভাগ্য দেশকালাতীত অনসভবতার ভাণ্ডারে নিহিত ছিল, বিধাতা কেবল বাস্তবরাজ্যে তাঁহাকে একটি ধনী বশীর এবং সুশীলা স্ত্রী দান করিয়াছিলেন। সত্রীর নাম বিধবাসিনী। সত্রীর নামটি অনাথবন্ধ পছন্দ করেন নাই এবং সীটিকেও রপে গুণে তিনি আপন ষোগ্য জ্ঞান করিতেন না, কিন্তু বিন্ধ্যবাসিনীর মনে স্বামীসৌভাগ্যগবের সীমা ছিল না। সকল সন্ত্রীর সকল স্বামীর অপেক্ষা তাঁহার স্বামী যে সকল বিষয়ে শ্রেষ্ঠ, এ সম্বন্ধে তাঁহার কোনো সন্দেহ ছিল না এবং তাঁহার স্বামীরও কোনো সন্দেহ ছিল না, এবং সাধারণের ধারণাও এই বিশ্বাসের অনকেল ছিল। এই স্বামীগব পাছে কিছুমাত্র ক্ষম হয়, এজন্য বিন্ধাবাসিনী সবাদাই সশঙ্কিত ছিলেন। তিনি যদি আপন হাদয়ের অভ্ৰভেদী অটল ভক্তিপবতের উচ্চতম শিখরের উপরে এই স্বামীটিকে অধিরোহণ করাইয়া তাঁহাকে মড় মতলোকের সমন্সত কটাক্ষপাত হইতে দরে রক্ষা করিতে পারিতেন, তবে নিশ্চিন্তচিত্তে পতিপদ্রোয় জীবন উৎসগ করিতেন। কিন্তু জড়জগতে কেবলমাত্র ভক্তির স্বারা ভক্তিভাজনকে উধের্ম তুলিয়া রাখা যায় না এবং অনাথবন্ধকেও পরেষের আদশ বলিয়া মানে না এমন প্রাণী সংসারে বিরল নহে। এইজন্য বিন্ধ্যবাসিনীকে অনেক দুঃখ পাইতে হইয়াছে। অনাথবন্ধ যখন কালেজে পড়িতেন তখন শ্বশরোলয়েই বাস করিতেন। পরীক্ষার