পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ (t O গল্পগুচ্ছ এবং তদীয় সন্ত্রীর বাক্যঝাল খাইয়া নীরবে পরিপাক করিতে লাগিল। ইতিমধ্যে বড়ো ভাই ছটিতে কিছু দিনের জন্য ঘরে আসিয়া স্ত্রীর নিকট হইতে অনেক উদ্দীপনাপণ ওজোগণসম্পন্ন বস্তৃতা শ্রবণ করিতে লাগিলেন। অবশেষে নিদ্রার ব্যাঘাত যখন প্রতি রাত্রেই গরতর হইয়া উঠিতে লাগিল তখন একদিন অনাথবন্ধকে ডাকিয়া শান্তভাবে স্নেহের সহিত কহিলেন, “তোমার একটা চাকরির চেষ্টা দেখা উচিত, কেবল আমি একলা সংসার চালাইব কী করিয়া ।” অনাথবন্ধ পদাহত সপের ন্যায় গজন করিয়া বলিয়া উঠিলেন, দই বেলা দই মষ্টি অত্যন্ত অখাদ্য মোটা ভাতের পর এত খোঁটা সহ্য হয় না। তৎক্ষণাৎ সাঁকে লইয়া শবশুরবাড়ি যাইতে সংকল্প করিলেন। কিন্তু সত্রী কিছুতেই সম্মত হইল না। তাহার মতে ভাইয়ের অন্ন এবং ভাজের গালিতে কনিষ্ঠের পারিবারিক অধিকার আছে, কিন্তু শ্বশুরের আশ্রয়ে বড়ো লন্জ । বিমধ্যবাসিনী শবশরেবাড়িতে দীনহীনের মতো নত হইয়া থাকিতে পারে, কিন্তু বাপের বাড়িতে সে আপন মৰ্যাদা রক্ষা করিয়া মাথা তুলিয়া চলিতে চায়। এমনসময় গ্রামের এনট্রেনস স্কুলে তৃতীয় শিক্ষকের পদ খালি হইল। অনাথবন্ধর দাদা এবং বিন্ধ্যবাসিনী উভয়েই তাঁহাকে এই কাজটি গ্রহণ করিবার জন্য পীড়াপীড়ি করিয়া ধরিলেন। তাহাতেও হিতে বিপরীত হইল। নিজের ভাই এবং একমাত্র ধর্মপত্নী ষ তাঁহাকে এমন একটা অত্যন্ত তুচ্ছ কাজের যোগ্য বলিয়া মনে করিতে পারেন, ইহাতে তাঁহার মনে দজয় অভিমানের সঞ্চার হইল এবং সংসারেব সমস্ত ক জকমের প্রতি পবাপেক্ষা চতুগণ বৈরাগ্য জন্মিয়া গেল । তখন আবার দাদা তাঁহার হাতে ধরিয়া, মিনতি করিয়া, তাঁহাকে অনেক করিয়া ঠান্ডা করিলেন । সকলেই মনে কবিলেন, ইহাকে আর কোনো কথা বলিয়া কাজ নাই, এ এখন কোনো প্রকারে ঘরে টিকিযা গেলেই ঘরের সৌভাগ্য । ছুটি অন্তে দাদা কম ক্ষেত্রে চলিয়, গেলেন ; শ্যামাশঙ্করী বন্ধে আকোশে মুখখন গোলাকার করিয়া তুলিয়া একটা বহৎ কদর্শনচক নিমর্শণ কবিয়া রতিলেন। অনাথবন্ধ বিন্ধ্যবাসিনীকে আসিয়া কহিলেন, “আজকাল বিলতে না গেলে কোনো ভদ্র চাকরি পাওয়া যায় না। আমি বিলাতে যাইতে মনস্থ করিতেছি, তুমি তোমার বাবার কাছ হইতে কোনো ছতায কিছু অর্থ সংগ্রহ করো।" এক তো বিলাত যাইবার কথা শুনিয়া বিন্ধ্যর মাথায় যেন বজ্ৰাঘাত হইল : তাহার পরে পিতার কাছে কী করিয়া অর্থ ভিক্ষ করিতে যাইবে তাহা সে মনে করিতে পারিল না এবং মনে করিতে গিয়া লক্ষজায় মরিয়া গেল। শবশরের কাছে নিজমুখে টাকা চাহিতেও অনাথবন্ধর অহংকারে বাধা দিল, অথচ বাপের কাছ হইতে কন্যা কেন যে ছলে অথবা বলে অর্থ আকর্ষণ করিয়া না আনিবে তাহা তিনি বুঝিতে পারিলেন না। ইহা লইয়া অনাথ অনেক রাগারগি করিলেন এবং মমপীড়িত বিধবাসিনীকে বিস্তর আশ্রপাত করিতে হইল। এমন করিয়া কিছুদিন সাংসারিক অভাবে এবং মনের কষ্টে কাটিয়া গেল : অবশেষে শরৎকালে পজা নিকটবতী হইল। কন্যা এবং জামাতাকে সাদরে আহবান করিয়া আনিবার জন্য রাজকুমারবাব বহন সমারোহে যানবাহনাদি প্রেরণ করিলেন। এক বৎসর পরে কন্যা স্বামীসহ পনরায় পিতৃভবনে প্রবেশ করিল। ধনী কুটবের যে আদর তাঁহার