পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२४२ গল্পগুচ্ছ তাহারা সখীর পীড়া আশঙ্কা করিয়া মাকে ডাকিয়া আনিল। মা আসিয়া কহিলেন, . “বিন্দ, কী হয়েছে মা, এখনও বার বন্ধ কেন!” বিন্ধ্য উচ্ছসিত আশ্রয় সম্বরণ করিয়া কহিল, "একবার বাবাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসো।” মা অত্যন্ত ভীত হইয়া তৎক্ষণাৎ রাজকুমারবাবকে সঙ্গে করিয়া বারে আসিলেন। বিন্ধ্য বার খলিয়া তাঁহাদিগকে ঘরে আনিয়া তাড়াতাড়ি বন্ধ করিয়া দিল । তখন বিন্ধ্য ভূমিতে পড়িয়া তাহার বাপের পা ধরিয়া বক্ষ শতধা বিদীর্ণ করিয়া কাদিয়া উঠিয়া কহিল, “বাবা! আমাকে মাপ করো, আমি তোমার সিন্দকে হইতে টাকা চুরি করিয়াছি।” তাহারা অবাক হইয়া বিছানায় বসিয়া পড়িলেন। বিন্ধ্য বলিল, তাহার স্বামীকে বিলাতে পাঠাইবার জন্য সে এই কাজ করিয়াছে। তাহার বাপ জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমাদের কাছে চাহিস নাই কেন।” বিন্ধ্যবসিনী কহিল, “পাছে বিলাত যাইতে তোমরা বাধা দেও।” রাজকুমারবাব অত্যন্ত রাগ করিলেন। মা কাঁদিতে লাগিলেন, মেয়ে কাঁদিতে লাগিল এবং কলিকাতার চতুদিক হইতে বিচিত্র সরে আনন্দের বাদ্য বাজিতে লাগিল । ষে বিন্ধ্য বাপের কাছে কখনো অথ' প্রাথনা করিতে পারে নাই এবং যে সত্ৰী স্বামীর লেশমাত্র অসমান পরমাত্মীয়ের নিকট হইতেও গোপন করিবার জন্য প্রাণপণ করিতে পারিত, আজ একেবারে উৎসবের জনতার মধ্যে তাহার পত্নী-অভিমান, তাহার দহিতৃসম্প্রম, তাহার আত্মমর্যাদা চণ হইয়া প্রিয় এবং অপ্রিয়, পরিচিত এবং অপরিচিত সকলের পদতলে ধলির মতো লুঠিত হইতে লাগিল। পাব হইতে পরামর্শ করিয়া, ষড়যন্ত্রপবক চাবি চুরি করিয়া, সতীর সাহায্যে রতিবতি অথ-অপহরণ-পব’ক অনাথবন্ধ বিলাতে পলায়ন করিয়াছে, এ কথা লইয়া আত্মীয়কুটুম্বপরিপণ বাড়িতে একটা ঢী ঢৗ পড়িয়া গেল। বারের নিকট দাঁড় ইয়া ভুবন কমল এবং আরও অনেক প্ৰবজন প্রতিবেশী দাসদাসী সমস্ত শুনিয়ছিল। রন্ধ্বব জমাতৃগহে উৎকণ্ঠিত কতগিহিণীকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া সকলেই কৌতাহলে এবং আশঙ্কায় বাঙ্গ হইয়া उन्नाजिम्नाझिठन । বিধবাসিনী কাহাকেও মুখ দেখাইল না। লর রন্ধ করিয়া অনাহারে বিছানার পড়িয়া রহিল। তাহার সেই শোকে কেহ দুঃখ অনুভব করিল না। ষড়যন্ত্রকারিণীর দষ্টবুদ্ধিতে সকলেই বিসিমত হইল। সকলেই ভাবিল, বিন্ধ্যর চরিত্র এতদিন অবসরাভাবে অপ্রকাশিত ছিল। নিরানন্দ গহে পাজার উংসব কোনো প্রকারে সম্পন্ন হইয়া গেল ।