পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ○8 গল্পগুচ্ছ বগের নিকটবতী স্থানে আছেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে অনাথবন্ধর অসামান্য ব্যারিস্টারি কীতিতে তাহদের মনে গবের সীমা রহিল না। বিন্ধ্যবাসিনী আপনাকে যশস্বী স্বামীর অযোগ্য সত্ৰী বলিয়া ধিক্কার দিতে লাগিল, পনেশচ অযোগ্য বলিয়াই স্বামীর অহংকার অধিক করিয়া অনুভব করিল। সে দুঃখে পীড়িত এবং গবে বিসফারিত হইল। ম্লেচ্ছ আচার সে ঘৃণা করে, তব স্বামীকে দেখিয়া মনে মনে কহিল, "আজকাল ঢের লোক তো সাহেব হয়, কিন্তু এমন তো কাহাকেও মানায় না— একেবারে ঠিক যেন বিলাতি সাহেব! বাঙালি বলিয়া চিনিবার যো নাই!” বাসাখরচ যখন অচল হইয়া আসিল— যখন অনাথবন্ধ মনের ক্ষোভে স্থির করিলেন, অভিশপ্ত ভারতবষে গণের সমাদর নাই এবং তাঁহার সবব্যবসায়ীগণ ঈষণবশত তাঁহার উন্নতিপথে গোপনে বাধা পথাপন করিতেছে— যখন তাঁহার খানার ডিশে আমিষ অপেক্ষা উদ্ভিজের পরিমাণ বাড়িয়া উঠিতে লাগিল, দগধ কুক্কুটের সম্মানকর পথান ভজিত চিংড়ি একচেটে করিবার উপক্ৰম করিল, বেশভূষার চিরূণতা এবং ক্ষৌরমসণ মুখের গবোজল জ্যোতি লান হইয়া আসিল— যখন সতীব্র নিখাদেবাঁধা জীবনতন্ত্রী ক্রমশ সকরণ কড়িমধ্যমের দিকে নামিয়া আসিতে লাগিল—এমন সময় রাজকুমারবাবরে পরিবারে এক গুরতর দর্ঘটনা ঘটিয়া অনাথবন্ধর সংকটসংকুল জীবনযাত্রায় পরিবতন আনয়ন করিল। একদা গংগাতীরবতী মাতুলালয় হইতে নৌকাযোগে ফিরিবার সময় রাজকুমারবাবর একমাত্র পত্র হরকুমার স্টিমারের সংঘাতে সন্ত্রী এবং বালক পত্র -সহ জলমগ্ন হইয়া প্রাণত্যাগ করে । এই ঘটনায় রাজকুমারের বংশে কন্যা বিন্ধ্যবাসিনী ব্যতীত আর কেহ রহিল না । নিদারুণ শোকের কথঞ্চিং উপশম হইলে পর রাজকুমারবাক অনাথবন্ধকে গিয়া অননয় করিয়া কহিলেন, “বাবা, তোমাকে প্রায়শিচত্ত করিয়া জাতে উঠিতে হইবে । তোমরা ব্যতীত আমার আর কেহ না יין অনাথবন্ধ উৎসাহসহকারে সে প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। তিনি মনে করিলেন, যে-সকল বার-লাইব্রেরি-বিহারী স্বদেশীয় ব্যারিস্টারগণ তাঁহাকে ঈষা করে এবং তাঁহার অসামান্য ধীশক্তির প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রকাশ করে না, এই উপায়ে তাহাদের প্রতি প্রতিশোধ লওয়া হইবে। রাজকুমারবাব পণ্ডিতদিগের বিধান লইলেন। তাঁহ বা বলিলেন অনাথবন্ধ যদি গোমাংস না খাইয়া থাকে তবে তাহকে জাতে তুলিবার উপায় আছে। বিদেশে যদিচ উক্ত নিষিদ্ধ চতুশ্পদ লাহার প্রিয় খাদ্যশ্রেণীর মধ্যে ভুক্ত হইত, তথাপি তাহা অস্বীকার করিতে তিনি কিছমা বিধা বোধ করিলেন না। প্ৰিয়বন্ধদের নিকট কহিলেন, “সমাজ যখন স্বেচ্ছাপবেক মিথ্যা কথা শুনিতে চাহে তখন একটা মখের কথায় তাহাকে বাধিত করিতে দোষ দেখি না। যে রসনা গোর খাইয়াছে সে রসনাকে গোময় এবং মিথ্যা কথা নামক দটাে কদয পদাৰ্থ বারা বিশাখ করিয়া লওয়া আমাদের আধুনিক সমাজের নিয়ম : আমি সে নিয়ম লঙ্ঘন করিতে 5ाष्ट्रि ना ।” প্রায়শ্চিত্ত করিয়া সমাজে উঠিবার একটা শাড়দিন নিদিষ্ট হইল। ইতিমধ্যে অনাথবন্ধ কেবল যে ধতিচাদর পরিলেন তাহা নহে, তক এবং উপদেশের স্বারা বিলাতি সমাজের গালে কালি এবং হিন্দসমাজের গালে চুন লেপন করিতে লাগিলেন ।