পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રહ૪ গল্পগুচ্ছ করিতে হইবে—তখন সে ঘরের বার রাধ করিয়া ভূমিতে লটাইয়া বারবার কঠিন মেকের উপর মাথা খড়িতে লাগিল—সমস্ত দিন অনাহারে মন্মযর মতো পড়িয়া রহিল। সন্ধ্যা হইয়া আসিল। দীপহীন গহকোণে অন্ধকার ঘনীভূত হইতে লাগিল। দৈবক্রমে একজন পরাতন প্রণয়ী আসিয়া "ক্ষীরো" "ক্ষীরো" শব্দে বারে করাঘাত করিতে লাগিল। ক্ষীরোদা অকস্মাৎ বার খালিয়া ঝটি হস্তে বাঘিনীর মতো গজন করিয়া ছটিয়া আসিল; রসপিপাস যবেকটি অনতিবিলম্বে পলায়নের পথ অবলম্বন कद्रिव्न ! ছেলেটা ক্ষধার জালায় কাঁদিয়া কাঁদিয়া খাটের নীচে ঘামাইয়া পড়িয়াছিল, সেই গোলমালে জাগিয়া উঠিয়া অন্ধকারের মধ্য হইতে ভগ্নকাতর কণ্ঠে “মা” “মা” করিয়া কাঁদিতে লাগিল। তখন ক্ষীরোদা সেই রোরুদ্যমান শিশকে প্রাণপণে বক্ষে চাপিয়া ধরিয়া বিদদেবেগে ছটিয়া নিকটবতী কপের মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়িল। শব্দ শনিয়া আলো হতে প্রতিবেশীগণ কাপের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইল। ক্ষীরোদা এবং শিশকে তুলিতে বিলম্বব হইল না। ক্ষীরোদা তখন অচেতন এবং শিশুটি মরিয়া গেছে। হাসপাতালে গিয়া ক্ষীরোদা আরোগ্য লাভ করিল। হত্যাপরাধে ম্যাজিসট্রেট তাহাকে সেসনে চালান করিয়া দিলেন। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ জজ মোহিতমোহন দত্ত স্ট্যাটটেরি সিভিলিয়ান। তাঁহার কঠিন বিচারে ক্ষীরোদার ফাঁসির হুকুম হইল। হতভাগিনীর অবস্থা বিবেচনা করিয়া উকিলগণ তাহাকে বাঁচাইবার জন্য বিস্তর চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কিছুতেই কৃতকাব হইলেন না। জজ তাহাকে তিলমাত্র দয়ার পাত্রী বলিয়া মনে করিতে পারিলেন না। না পারিবার কারণ আছে। এক দিকে তিনি হিন্দমহিলাগণকে দেবী আখ্যা দিয়া থাকেন, অপর দিকে সত্ৰীজাতির প্রতি তাঁহার অা তরিক অবিশ্বাস । তাঁহার মত এই যে, রমণীগণ কুলবন্ধন ছেদন করিবার জন্য উন্মুখ হইয়া আছে, শাসন তিলমাত্র শিথিল হইলেই সমাজপিঞ্জরে একটি কুলনারীও অবশিষ্ট থাকিবে না। তাঁহার এরপে বিশ্বাসেরও কারণ আছে । সে কারণ জ্ঞানিতে গেলে মোহিতের যৌবন-ইতিহাসের কিয়দংশ আলোচনা করিতে হয় । মোহিত যখন কালেক্তে সেকেণ্ড ইয়ারে পড়িতেন তখন আকারে এবং আচারে এখনকার হইতে সম্পণে স্বতন্ত্র প্রকারের মানুষ ছিলেন। এখন মোহিতের সম্মুখে টাক, পশ্চাতে টিকি, মণ্ডিত মাখে প্রতিদিন প্রাতঃকালে খরক্ষরধারে গলফশমশ্রর অঙ্কুর উচ্ছেদ হইয়া থাকে ; কিন্তু তখন তিনি সোনার চশমায়, গোঁফদাড়িতে এবং সাহেবি ধরনের কেশবিন্যাসে উনবিংশ শতাব্দীর নতনসংস্করণ কাতিকটির মতো ছিলেন। বেশভূষায় বিশেষ মনোযোগ ছিল, মদ্যমাংসে অরচি ছিল না এবং আনুষঙ্গিক আরও দটো-একটা উপসর্গ ছিল। আদরে একঘর গহস্থ বাস করিত। তাহাদের হেমশশী বলিয়া এক বিধবা কন্যা