পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミも 。 গল্পগুচ্ছ এটা ষেন কেবল একটা সযক্তি এবং সদ্যবিবেচনার কথা— ইহার মধ্যে যে ভারি একটা মহত্ত্ব বীরত্ব বা অসামান্য কিছু আছে, এমন ভাব তাঁহার লেশমাত্র ছিল না। এইবার আমার হাসিবার পালা ছিল। কিন্তু, আমার কি তেমন করিয়া হাসিবার ক্ষমতা আছে। আমি উপন্যাসের প্রধান নায়কের ন্যায় গভীর সমক্ষেভাবে বলিতে লাগিলাম, “যতদিন এই দেহে জীবন আছে— ” তিনি বাধা দিয়া কহিলেন, "নাও নাও ! আর বলিতে হইবে না। তোমার কথা শনিয়া আমি আর বাঁচি না!” আমি পরাজয় স্বীকার না করিয়া বলিলাম, "এ জীবনে আর কাহাকেও ভালোবাসিতে পারিব না।” শুনিয়া আমার স্ত্রী ভারি হাসিয়া উঠিলেন। তখন আমাকে ক্ষান্ত হইতে হইল। জানি না, তখন নিজের কাছেও কখনো স্পষ্ট স্বীকার করিয়াছি কি না কিন্তু এখন বঝিতে পারিতেছি, এই আরোগ্য-আশা-হীন সেবাকাষে আমি মনে মনে পরিশ্রান্ত হইয়া গিয়াছিলাম। এ কাযে যে ভঙ্গ দিব, এমন কল্পনাও আমার মনে ছিল না; অথচ, চিরজীবন এই চিররগণকে লইয়া যাপন করিতে হইবে এ কল্পনাও আমার নিকট পীড়াজনক হইয়াছিল। হায়, প্রথম-যৌবনকালে যখন সম্মুখে তাকাইয়াছিলাম তখন প্রেমের কুহকে, সখের আশবাসে, সৌন্দষের মরীচিকায় সমস্ত ভবিষ্যৎ জীবন প্রফুল্ল দেখাইতেছিল। আজ হইতে শেষ পর্যন্ত কেবলই আশাহীন সদেীর্ঘ সতৃষ্ণ মরুভূমি। আমার সেবার মধ্যে সেই আন্তরিক শ্রান্তি নিশ্চয় তিনি দেখিতে পাইয়াছিলেন । তখন জানিতাম না কিন্তু এখন সন্দেহমাত্র নাই যে, তিনি আমাকে যন্তোক্ষরহীন প্রথমভাগ শিশুশিক্ষার মতো অতি সহজে বুঝিতেন ; সেইজন্য যখন উপন্যাসের নায়ক সাজিয়া গভীরভাবে তাঁহার নিকট কবিত্ব ফলাইতে যাইতাম তিনি এমন সুগভীর স্নেহ অথচ অনিবায কৌতুকের সহিত হাসিয়া উঠিতেন। আমার নিজের অগোচর অন্তরের কথাও অন্তষামীর ন্যায় তিনি সমস্তই জানিতেন এ কথা মনে করিলে আজও লন্জায় মরিয়া যাইতে ইচ্ছা করে। হারান ডাক্তার আমাদের সবজাতীয়। তাঁহার বাড়িতে আমার প্রায়ই নিমন্ত্রণ থাকিত । কিছুদিন যাতায়াতের পর ডাক্তার তাঁহার মেয়েটির সঙ্গে আমার পরিচয় করাইয়া দিলেন। মেয়েটি অবিবাহিত; তাহার বয়স পনেরো হইবে। ডাক্তার বলেন, তিনি মনের মতো পাত্র পান নাই বলিয়া বিবাহ দেন নাই। কিন্তু, বাহিরের লোকের কাছে গজেব শুনিতাম— মেয়েটির কুলের দোষ ছিল। কিন্তু, আর কোনো দোষ ছিল না। যেমন সরপে তেমনি সরশিক্ষা। সেইজন্য মাঝে মাঝে এক-একদিন তাঁহার সহিত নানা কথার আলোচনা করিতে করিতে আমার বাড়ি ফিরিতে রাত হইত, আমার সাঁকে ঔষধ খাওয়াইবার সময় উত্তীণ হইয়া যাইত। তিনি জানিতেন আমি হারান ডাক্তারের বাড়ি গিয়াছি, কিন্তু বিলবের কারণ একদিনও আমাকে জিজ্ঞাসাও করেন নাই । # মরুভূমির মধ্যে আর-একবার মরীচিকা দেখিতে লাগিলাম। তৃষ্ণা যখন বক পৰ্যন্ত তখন চোখের সামনে কালপরিপাপ স্বচ্ছ জল ছলছল ঢলঢল করিতে লাগিল । তখন মনকে প্রাণপণে টানিয়া আর ফিরাইতে পারিলাম না।