পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

이 을 গল্পগুচ্ছ বিছানায় আসিয়া শইলাম; শ্রাতশরীরে মনোরমা অবিলবে ঘামাইয়া পড়িল। তখন অন্ধকারে কে একজন আমার মশারির কাছে দাঁড়াইয়া সষেপ্ত মনোরমার দিকে একটিমাত্র দীঘ শীর্ণ অস্থিসার অঙ্গলি নির্দেশ করিয়া যেন আমার কানে কানে অত্যন্ত চুপিচুপি অসফটকণ্ঠে কেবলই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, “ও কে। ও কে। ও কে গো ।” তাড়াতাড়ি উঠিয়া দেশালাই জনালাইয়া বাতি ধরাইলাম। সেই মহেতেই ছায়ামতি" মিলাইয়া গিয়া, আমার মশারি কপিাইয়া, বোট দলাইয়া, আমার সমস্ত ঘমান্ত শরীরের রক্ত হিম করিয়া দিয়া হাহা—হাহা—হাহা করিয়া একটা হাসি অন্ধকার রাত্রির ভিতর দিয়া বহিয়া চলিয়া গেল। পদ্মা পার হইল, পদ্মার চর পার হইল, তাহার পরবতী সমস্ত সপত দেশ গ্রাম নগর পার হইয়া গেল— যেন তাহা চিরকাল ধরিয়া দেশদেশান্তর লোকলোকান্তর পার হইয়া ক্রমশ ক্ষীণ ক্ষীণতর ক্ষীণতম হইয়া অসীম সদরে চলিয়া যাইতেছে; কমে যেন তাহা জন্মমৃত্যুর দেশ ছাড়াইয়া গেল : ক্লমে তাহা যেন সচির অগ্রভাগের ন্যায় ক্ষীণতম হইয়া আসিল; এত ক্ষীণ শব্দ কখনও শনি নাই, কল্পনা করি নাই; আমার মাথার মধ্যে যেন অনন্ত আকাশ রহিয়াছে এবং সেই শব্দ যতই দরে যাইতেছে কিছুতেই আমার মস্তিকের সীমা ছাড়াইতে পারিতেছে না; অবশেষে যখন একান্ত অসহ্য হইয়া আসিল তখন ভাবিলাম, আলো নিবাইয়া না দিলে ঘামাইতে পারিব না। যেমন আলো নিবাইয়া শুইলাম অমনি আমার মশারির পাশে, আমার কানের কাছে, অন্ধকারে আবার সেই অবরুদ্ধ সবর বলিয়া উঠিল, “ও কে, ও কে, ও কে গো ।” আমার বকের রক্সের ঠিক সমান তালে ক্ৰমাগতই ধৰনিত হইতে লাগিল, “ও কে, ও কে, ও কে গো ও কে, ও কে. ও কে গো ।” সেই গভীর রাত্রে নিস্তব্ধ বোটের মধ্যে আমার গোলাকার ঘড়িটাও সজীব হইয়া উঠিয়া তাহার ঘণ্টার কাঁটা মনোরমার দিকে প্রসারিত করিয়া শেলফের উপর হইতে তালে তালে বলিতে লাগিল, “ও কে, ও কে, ও কে গো । ও কে, ও কে. ও কে গো ।” বলিতে বলিতে দক্ষিণাবাব পাংশবেণ হইয়া আসিলেন, তাঁহার কন্ঠ রখে হইয়: আসিল। আমি তাঁহাকে পশ করিয়া কহিলাম, “একটা জল খান ।” এমন সময় হঠাৎ আমার কেরোসিনের শিখাটা দপ দপ করিতে করিতে নিবিয়া গেল। হঠাৎ দেখিতে পাইলাম, বাহিরে আলো হইয়াছে। কাক ডাকিয়া উঠিল। দোয়েল শিশ দিতে লাগিল। আমার বাড়ির সম্মুখবতী পথে একটা মহিষের গাড়ির কাচি ক্যাঁচ শব্দ জাগিয়া উঠিল। তখন দক্ষিণাবাবরে মুখের ভাব একেবারে বদল হইয়া গেল। ভয়ের কিছমাত্র চিহ্ন রহিল না। রাত্রির কুহকে, কাল্পনিক শঙ্কার মত্ততায় আমার কাছে যে এত কথা বলিয়া ফেলিয়াছেন সেজন্য যেন অত্যন্ত লজিত এবং আমার উপর আন্তরিক ক্লখ হইয়া উঠিলেন। শিষ্টসম্ভাষণমাল না করিয়া অকস্মাৎ উঠিয়া দ্রুতবেগে চলিয়া গেলেন। সেইদিনই অধরাত্রে আবার আমার বারে আসিয়া ঘা পড়িল, “ডাস্কার! ডাক্তার " মাধ ১৩o২