পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আপদ ミa & কুক্করকে আদর দিয়া এমনি পধিত করিয়া তুলিল যে, সে অনাহত শরতের সসজিত ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া নিম'ল - জাজিমের উপর পদপল্লবচতুষ্টয়ের ধলিরেখায় আপন শভোগমনসংবাদ পথায়ীভাবে মুদ্রিত করিয়া আসিতে লাগিল । নীলকান্তের চতুদিকে দেখিতে দেখিতে একটি স্বহং ভক্তশিশু-সম্প্রদায় গঠিত হইয়া উঠিল, এবং সে বৎসর গ্রামের আম্রকাননে কচি আম পাকিয়া উঠিবার অবসর পাইল না । কিরণ এই ছেলেটিকে বড়ো বেশি আদর দিতেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। শরৎ এবং শরতের মা সে বিষয়ে তহিকে অনেক নিষেধ করিতেন, কিন্তু তিনি তাহা মানিতেন না। শরতের পরাতন জামা মেজা এবং নতন ধতি চাদর জনতা পরাইয়া তিনি তাহকে বাব সাজ,ইয়া তুলিলেন। মাঝে মাঝে যখন-তখন তাহাকে ডাকিয়া লইয়া তাঁহার স্নেহ এবং কৌতুক উভয়ই চরিতথা হইত। কিরণ সহাস্যমুখে পানের বাটা পাশে রাখিযা খাটের উপর বসিতেন, দাসী তাঁহর ভিজে এলো চুল চিরিয়াচিরিয়া ঘষিয়া-ঘষিয়া শুকাইয়া দিত এবং নীলকান্ত নীচে দাঁড়াইয়া হাত নাড়িয়া নলদময়ন্তীর পল অভিনয় করিত– এইরূপে দীঘ মধ্যাহ্ন অত্যন্ত শীঘ্ৰ কাটিয়া যাইত । কিরণ শরংকে তাঁহার সহিত একসনে দশকশ্রেণীভুক্ত করিবার চেষ্টা করিতেন, কিন্তু শরৎ অত্যন্ত বিরক্ত হইতেন এবং শরতের সম্মুখে নীলকাতের প্রতিভাও সম্পণে সফতি প ইত না। শাশুড়ি এক-একদিন ঠাকুব-দেবতার নাম শনিবার আশায় আকৃষ্ট হইয়া আসিতেন, কিন্তু অবিলম্বে তাঁহ র চিরাভাসত মধ্যাহ্নকালীন নিদ্রাবেশ ভক্তিকে অভিভূত এবং তাঁহাকে শয্যাশয়ী করিয়া দিত। শরতের কাছ হইতে কানমলা চড়ট চাপড়টা নীলকান্তের আদন্টে প্রায়ই জটিত : কিন্তু তদপেক্ষা কঠিনতর শাসনপ্রণালীতে আজন্ম অভ্যস্ত থাকতে সেটা তাহার নিকট অপমান বা বেদনা-জনক বোধ হইত না । নীলকান্তের দঢ় ধারণা ছিল যে, পৃথিবীর জলপথলবিভাগেল ন্যায় মানবজন্মটা আহার এবং প্রহারে বিভক্ত: প্রহারের অংশটাই অধিক । নীলকাতের ঠিক কত বয়স নির্ণয় কবিয়া বলা কঠিন ; যদি চৌদ-পনেরো হয় তবে বয়সের অপেক্ষা মুখ অনেক পাকিয়াছে বলিতে হইবে, যদি সতেরো-আঠারো হয় তবে বয়সেব অনরপে পক ধরে নাই। হয় সে অকালপক্ক নয় সে অকাল-অপক। আসল কথা এই, সে অতি অলপ বয়সেই যাত্রার দলে ঢকিয়া রাধিকা দময়ন্তী সীতা এবং বিদার সখী সঞ্জিত । অধিকারীর আবশ্যক-মত বিধাতার বরে খানিক দর পয’ত বাড়িয়া তাহার বড় থামিয়া গেল। তাহাকে সকলে ছোটোই দেখিত, আপনাকে সে ছোটেই জ্ঞ ন করিত, বয়সের উপযন্ত সম্মান সে কাহারও কাছে পাইত না। এই সকল স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক কারণপ্রভাবে সতেরো বৎসর বয়সের সময় তাহাকে অনতিপক্ক সতেরোর অপেক্ষা অতি-পরিপক্ক চোদর মতো দেখাইত। গোঁফের রেখা না উঠাতে এই ভ্রম আরও দৃঢ়মতল হইয়াছিল। তামাকের ধোঁয়া লাগিয়াই হউক, বা বয়সানাচিত ভাষা-প্রয়োগ-বশতই হউক, নীলকান্তের ঠোঁটের কাছটা কিছ বেশি পাকা বোধ হইত, কিন্তু তাহার বাহং তারাবিশিষ্ট দুইটি চক্ষর মধ্যে একটা সারলা এবং তারণা ছিল। অনুমান করি, নীলকাতের ভিতরটা স্বভাবত কাঁচা, কিন্তু যাত্রার দলের তা লাগিয়া উপরিভাগে পক্কতার লক্ষণ দেখা দিয়াছে।