পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミbbf গল্পগুচ্ছ প্রতিবেশিনী তারা কহিল, "স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করিতে হয় ঘরে বসিয়া করা-না, বাপ; ঘর ছাড়িয়া যাইবার আবশ্যক কী। হাজার হউক, স্বামী তো বটে।” সঙ্গে যাহা টাকা ছিল সমস্ত খরচ করিয়া, গহনাপত্র বেচিয়া শশী তাহার ভাইকে মৃত্যুমুখ হইতে রক্ষা করিল। তখন সে খবর পাইল, বারিগ্রামে তাহদের যে বড়ো জোত ছিল, যে জোতের উপরে তাহাদের বাড়ি, নানারপে যাহার আয় প্রায় বাষিক দেড় হাজার টাকা হইবে, সেই জোতটা জমিদারের সহিত যোগ করিয়া জয়গোপাল নিজের নামে খারিজ করিয়া লইয়াছে। এখন বিষয়টি সমস্তই তাহদের, তাহার ভাইয়ের নহে। ব্যামো হইতে সারিয়া উঠিয়া নীলমণি করণস্বরে বলিতে লাগিল, "দিদি, বাড়ি চলো।” সেখানে তাহার সঙ্গী ভাগিনেয়দের জন্য তাহার মন কেমন করিতেছে । তাই বারবার বলিল, “দিদি আমাদের সেই ঘরে চলো-না, দিদি " শুনিয়া দিদি কেবলই কাঁদিতে লাগিল—“আমাদের ঘর আর কোথায় " কিন্তু কেবল কাঁদিয়া কোনো ফল নাই, তখন পথিবীতে দিদি ছাড়া তাহার ভাইয়ের আর কেহ ছিল না । ইহা ভাবিয়া চোখের জল মুছিয শশী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তারিণীবাবর অন্তঃপরে গিয়া তাঁহার সত্রীকে ধরিল। ডেপুটিবাব জয়গোপালকে চিনিতেন। ভদ্রঘরের সতী ঘরের বাহির হইয়া বিষয়সম্পত্তি লইয়া স্বামীর সহিত বিবাদে প্রবৃত্ত হইতে চাহে, ইহাতে শশীর প্রতি তিনি বিশেষ বিরক্ত হইলেন। তাহাকে ভুলইয়া রাখিয়া তৎক্ষণাং জয়গোপালকে পত্র লিখিলেন। জয়গোপাল শ্যালক-সহ তাহার সন্ত্রীকে বলপবাক নৌকায় তুলিয়া বাড়ি লইয়া গিয়া উপস্থিত করিল। স্বামী-স্ত্রীতে দ্বিতীয় বিচ্ছেদের পর পুনশ্চ এই দ্বিতীযবার মিলন হইল। প্রজাপতির নিবন্ধ ! অনেক দিন পরে ঘরে ফিরিয়া পরাতন সহচরদিগকে পাইয়া নীলমণি বড়ো আনন্দে খেলিয়া বেড়াইতে লাগিল। তাহার সেই নিশিচনত আনন্দ দেখিয়া অন্তরে অন্তরে শশীর হৃদয় বিদীণ হইল। চতুথ পরিচ্ছেদ শীতকালে ম্যাজিস্ট্রেট-সাহেব মফঃস্বল-পর্যবেক্ষণে বহির হইয়া শিকার-সন্ধানে গ্রামের মধ্যে তাঁবু ফেলিয়াছেন। গ্রামের পথে সাহেবের সঙ্গে নীলমণির সাক্ষাৎ হয়। অন্য বালকেরা তাঁহাকে দেখিয়া চাণক্যশেলাকের কিঞ্চিৎ পরিবতনপবাক নখ দন্তী শঙ্গী প্রভৃতির সহিত সাহেবকেও যোগ করিয়া যথেষ্ট দরে সরিয়া গেল। কিন্তু, সংগম্ভীরপ্রকৃতি নীলমণি অটল কৌতুহলের সহিত প্রশান্তভাবে সাহেবকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিল । সাহেব সকৌতুকে কাছে আসিয়া তাহকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "তুমি পাঠশালায় পড় ?” বালক নীরবে মাথা নাড়িয়া জানাইল, “হাঁ।” সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কোন পত্ৰক পড়িয়া থাক।”