পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

' o * : * | ఫిసి 8 গল্পগুচ্ছ উপস্থিত হইয়াছিল সেই কক্ষপনাবেগে এই আলোকময় লোকময় বাদ্যসংগীতমুখরিত দৃশ্যপটশোভিত রঙ্গভূমি তাহার চক্ষে দিবগণ অপরপেতা ধারণ করিল। তাহার সেই প্রাচীরবেষ্টিত নিজন নিরানন্দ অন্তঃপর হইতে এ কোন-এক সমসজিত সন্দের উৎসবলোকের প্রান্তে আসিয়া উপস্থিত হইল! সমস্ত স্বপন বলিয়া বোধ হইতে লাগিল । সেদিন মানভঞ্জন অপেরা অভিনয় হইতেছে । কখন ঘণ্টা বাজিল, বাদ্য থামিয়া গেল, চঞ্চল দশকগণ মহোতে স্থির নিস্তব্ধ হইয়া বসিল, রঙ্গমঞ্চের সম্মুখবতী আলোকমালা উক্তজবলতর হইয়া উঠিল, পট উঠিয়া গেল, একদল সমসজিত নটী ব্ৰজাঙ্গনা সাজিয়া সংগীতসহযোগে নত্য করিতে লাগিল, দশকগণের করতালি ও প্রশংসাবাদে নাট্যশালা থাকিয়া-থাকিয়া ধৰনিত কল্পিত হইয়া উঠিল— তখন গিরিবালার তরণ দেহের রক্তলহরী উন্মাদনায় আলোড়িত হইতে লাগিল। সেই সংগীতের তানে, আলোক ও আভরণের ছটায়, এবং সম্মিলিত প্রশংসাধননিতে সে ক্ষণকালের জন্য সমাজ সংসার সমস্তই বিস্মত হইয়া গেল – মনে করিল, এমন এক জায়গায় আসিয়াছে যেখানে বন্ধনমুক্ত সৌন্দয পণ স্বাধীনতার কোনো বাধ্যমাত্র নাই। সাধো মাঝে মাঝে আসিয়া ভীতসববে কানে কানে বলে, “বউঠাকরন, এই রেল বাড়ি ফিরিয়া চলো। দাদাবীব জানিতে পারিলে বক্ষা থাকিবে না।” গিরিবালা সে কথায় কণপাত করে না। তাহার মনে এখন আর কিছুমাত্র ভয় নাই । অভিনয় অনেক দর অগ্রসর হইল। রাধার দনুজ্ঞায মান হইয়াছে ; সে মনসাগরে কৃষ্ণ আর কিছুতেই থই পাইতেছে না ; কত অনন্যবিনয় সাধাসাধি কাঁদাকদি. কিছুতেই কিছু হয় না। তখন গবভবে গিবিকল’ব লক্ষ ফুলিতে লাগিল। কৃষ্ণের এই লাঞ্ছনায় সে যেন মনে মনে রাধা হইয়া নিজের অসীম প্রতীপ নিজে অনুভল করিতে লাগিল। কেহ তাহাকে কখনও এমন করিয়া সাধে নাই ; সে অবহেলিত অবনানিত পরিত্যক্ত সত্ৰী, কিন্তু তব সে এক অপ বা মোহে স্থির করিল যে এমন করিয়া নিষ্ঠুরভাবে কাঁদাইবার ক্ষমতা তাহারও আছে । সৌন্দয্যের যে কেমন দোদণ্ডপ্রতাপ তাহা সে কানে শুনিয়াছে, অনমান করিয়াছে মাত্র – অঙ্গ দীপের আলোকে, গানের সরে, সদশ্য রঙ্গমঞ্চের উপরে তাহা সপেস্টরপে প্রত্যক্ষ করিল। নেশায় তাহার সমস্ত মস্তিক ভরিয়া উঠিল। অবশেষে যবনিকাপতন হইল, গ্যাসের আলো ল’ন হইয়া আসিল, দশকগণ প্রস্থানের উপক্ৰম করিল : গিরিবালা মন্তমধের মতো বসিয়: রহিল । এখান হইতে উঠিয়া যে বাড়ি যাইতে হইবে এ কথা তাহার মনে ছিল না। সে ভাবিতেছিল, অভিনয় বুঝি ফরাইবে না। যবনিকা আবার উঠিলে ; রাধিকার নিকট শ্রীকৃষ্ণের পরাভব, ইহা ছাড়া আর কোনো বিষয় উপস্থিত নাই। সাধো কহিল, “বউঠাকরুন, করো কী, ওঠো, এখনই সমস্ত আলো নিবাইয়া দিবে।” গিরিবালা গভীর রাত্রে আপন শয়নকক্ষে ফিরিয়া আসিল । কোণে একটি দীপ মিট মিট করিতেছে— ঘরে একটি লোক নাই, শব্দ নাই— গহপ্রান্তে নিজন শয্যার উপরে একটি পরাতন মশারি বাতাসে অলপ অলপ দলিতেছে ; তাহার প্রতিদিনের জগৎ অত্যন্ত বিত্র বিরস এবং তুচ্ছ বলিয়া ঠেকিতে লাগিল। কোথায় সেই সৌন্দর্যময় আলোকময় সংগীতময় রাজা— যেখানে সে আপনার সমস্ত মহিমা বিকীর্ণ