পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○> ミ গল্পগুচ্ছ লিখিতে উদ্যত হইলেন। ইন্দ্রাণী তখন চৌকির হাতা হইতে নীচে নামিয়া মাদরে-পাতা মেজের উপর স্বামীর পায়ের কাছে বসিয়া তাঁহার কোলের উপর বাহ রাখিয়া বলিল, "এত তাড়াতাড়ি কাজ নেই। চিঠি আজ থাক। কাল সকালে যা হয় স্থির কোরো।” অবিকা উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “না, আর এক দণ্ড বিলব করা উচিত নয় । தி: ইন্দ্রাণী তাহার পিতামহের হৃদয়মাণালে একটিমাত্র পমের মতো ফটিয়া উঠিয়া ছিল। তাঁহার অন্তর হইতে সে যেমন মেনহরস আকষণ করিয়া লইয়াছিল তেমনি পিতামহের চিত্তসঞ্চিত অনেকগুলি ভাব সে অলক্ষ্যে গ্রহণ করিয়াছিল। মকুন্দলালের পরিবারের প্রতি গৌরীকান্তের যে-একটি অচল নিষ্ঠা ও ভক্তি ছিল ইন্দ্রাণী যদিও তাহা সম্পণে প্রাপ্ত হয় নাই, কিন্তু প্রভুপরিবারের হিতসাধনে জীবন অপণ করা যে তাহাদের কতব্য, এই ভাবটি তাহার মনে দঢ়বদ্ধমলে হইয়া গিয়াছিল। তাহার সুশিক্ষিত স্বামী ইচ্ছা করিলে ওকালতি করিতে পারিতেন, সম্মানজনক কাজ লইতে পারিতেন, কিন্তু তাঁহার দীর হৃদয়ের দঢ় সংস্কার অনুসরণ করিয়া তিনি অনন্যমনে সন্তুষ্টচিত্তে বিনোদের বিষয়-সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করিতেছিলেন। ইন্দ্রাণী যদিও অপমানে আহত হইয়াছিল, তথাপি তাহার স্বামী যে বিনোদবিহারীর কাজ ছাড়িয়া দিবে, এ তাহার কিছতেই মনে লইল না। ইন্দ্রাণী তখন যুক্তির অবতারণা করিয়া মদ মিন্ট বরে কহিল, "বিনোদববর তো কোনো দোষ নেই, তিনি এর কিছুই জানেন না— তাঁর সন্ত্রীর উপর রাগ করে তুমি হঠাৎ তাড়াতাড়ি তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করতে যাবে কেন ।” শুনিয়া অবিকাবাব উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিলেন ; নিজের সংকল্প তাঁহার নিকট অত্যন্ত হাস্যকর বলিয়া বোধ হইল। তিনি কহিলেন, “সে একটা কথা বটে। কিন্তু মনিব হোন আর যিনিই হোন, ওদের ওখানে আর কখনও তোমাকে পাঠ:চ্ছি নে।” এই অলপ একট ঝড়েই সেদিনকার মতো মেঘ কাটিয়া গেল, গহ প্রসন্ন হইয়া উঠিল, এবং স্বামীর বিশেষ আদরে ইন্দ্রাণী বাহিরের সমস্ত অনাদর বিস্মত হইয়া গেল। তৃতীয় পরিচ্ছেদ বিনোদবিহারী অবিকাচরণের উপর সম্পণে ভার দিয়া জমিদারির কাজ কিছুই দেখিতেন না। নিতান্তনিভার ও অতিনিশ্চয়তা -বশত কোনো কোনো স্বামী ঘরের সন্ত্রীকে যেরপে অবহেলার চক্ষে দেখিয়া থাকে, নিজের জমিদারির প্রতিও বিনোদের কতকটা সেই ভাবের উপেক্ষা ছিল। জমিদারির আয় এতই নিশ্চিত এতই বাঁধা যে তাহাকে আয় বলিয়া বোধ হয় না— তাহা অভ্যস্ত, এবং তাহার কোনো আকর্ষণ ছিল না। বিনোদের ইচ্ছা ছিল, একটা সংক্ষেপ সড়ঙ্গপথ অবলম্বন করিয়া হঠাৎ এক রাবির মধ্যে কুবেরের ভাণ্ডারের মধ্যে প্রবেশ করিবেন। সেইজন্য নানা লোকের পরামশে তিনি গোপনে নানাপ্রকার আজগবি ব্যবসায়ে হস্তক্ষেপ করিতেন। কখনও স্থির হইত, দেশের সমস্ত বাবলা গাছ জমা লইয়া গোরর গাড়ির চাকা তৈরি করাইবেন; কখনও পরামর্শ হইত, সন্দেরবনের সমস্ত মধ্যচর তিনি আহরণ করবেন: কখনও লোক পঠাইয়া