পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○> ○ গল্পগুচ্ছ সে যেন তাহার হদয়দেবতাকে আপন হদয়মন্দিরে তুলিয়া রাখিতে চায়। , , স্থির হইল অবিকাচরণ এখনই কাজ ছাড়িয়া দিবেন— আজ আর কেহ তাহাতে কিছমাত্র প্রতিবাদ করিল না। কিন্তু এই তুচ্ছ প্রতিশোধে ইন্দ্রাণীর মন কিছই সাত্বনা মানিল না। যখন সন্দিগ্ধ প্রভু নিজেই অবিককে ছাড়াইতে উদ্যত, তখন কাজ ছাড়িয়া দিয়া তাহার আর কী শাসন হইল। কাজে জবাব দিবার সংকল্প করিয়াই অবিকার রাগ থামিয়া গেল, কিন্তু সকল কাজকম সকল আরামবিশ্রামের মধ্যে ইন্দ্রাণীর রাগ তাহার হৃৎপিন্ডের মধ্যে জনলিতে লাগিল । পরিশিষ্ট এমন সময়ে চাকর আসিয়া খবর দিল, বাবদের বাড়ির খাজাঞ্চি আসিয়াছে। অবিকা মনে করিলেন, বিনোদ স্বাভাবিক চক্ষলন্জবশত খাজাঞ্চির মুখ দিয়া তাঁহাকে কাজ হইতে জবাব দিয়া পাঠাইয়াছেন। সেইজন্য নিজেই একখানি ইস্তফাপত্র লিখিয়া খাজাঞ্চির হস্তে গিয়া দিলেন। খাজটি তৎসম্বন্ধ কোনো প্রশন না করিয়া কহিল, "সবনাশ হইয়াছে।" অশ্বিকা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কণী হইয়াছে।” তদত্তরে শুনিলেন, যখন হইতে অবিকাচরণের সতকতাবশত খাজাঞ্চিখানা হইতে বিনোদের টাকা লওয়া বন্ধ হইয়াছে তখন হইতে বিনোদ নানা স্থান হইতে গোপনে বিস্তর টাকা ধার লইতে আরম্ভ করিয়ছিল। একটার পর আর-একটা ব্যাবসা ফাঁদিয়া সে যতই প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছিল ততই তাহার রেখে চড়িয়া যাইতেছিল— ততই নতেন নতেন অসম্ভব উপায়ে আপন ক্ষতি নিবারণের চেষ্টা করিয়া অবশেষে আকন্ঠ ঋণে নিমগ্ন হইয়াছে। অবিকাচরণ যখন পীড়িত ছিলেন তখন বিনোদ সেই সুযোগে তহবিল হইতে সমস্ত টাকা উঠাইয়া লইয়াছে। বাঁকাগাড়ি পরগনা অনেক কাল হইতেই পাশববতী জমিদারের নিকট রেহেনে আবদ্ধ ; সে এ-পর্যন্ত টাকার জন্য কোনোপ্রকার তাগাদা না দিয়া অনেক টাকা সদে জমিতে দিয়াছে, এখন সময় বকিয়া হঠাৎ ডিক্লি করিয়া লইতে উদ্যত হইয়াছে। এই তো বিপদ । শুনিয়া অবিকাচরণ কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হইয়া রহিলেন। অবশেষে কহিলেন, “আজ কিছুই ভেবে উঠতে পারছি নে— কাল এর পরামর্শ করা যাবে।” খাজন্টি যখন বিদায় লইতে উঠিলেন তখন অবিক তাঁহার ইস্তফাপত চাহিয়া লইলেন । অন্তঃপরে আসিয়া অবিকা ইন্দ্রাণীকে সকল কথা বিস্তারিত জানাইয়া কহিলেন, “বিনাদের এ অবস্থায় তো আমি কাজ ছেড়ে দিতে পারি নে।” ইন্দ্রাণী অনেকক্ষণ প্রস্তরমতির মতো স্থির হইয়া রহিল। অবশেষে অন্তরের সমস্ত বিরোধম্মবন্ধ সবলে দমন করিয়া নিশবাস ফেলিয়া কহিল, “না, এখন ছাড়তে পার না ।” | তাহার পর কোথায় টাকা কোথায় টাকা করিয়া সন্ধান পড়িয়া গেল—যথেষ্ট পরিমাণে টাকা আর জটে না। অতঃপর হইতে গহনাগুলি সংগ্রহ করিবার জন্য অবিকা বিনোদকে পরামর্শ দিলেন। ইতিপবে ব্যাবসা উপলক্ষ্যে বিনোদ সে চেষ্টা