পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ծ8 Հ গল্পগুচ্ছ ইচ্ছাপত্রণ সবলচন্দ্রের ছেলেটির নাম সশীলচন্দ্র। কিন্তু সকল সময়ে নামের মতো মানষেটি হয় না। সেইজন্যই সুবলচন্দ্র কিছু দবল ছিলেন এবং সুশীলচন্দ্র বড়ো শান্ত ছিলেন না। ছেলেটি পাড়াসন্ধ লোককে অস্থির করিয়া বেড়াইত, সেইজন্য বাপ মাঝে মাঝে শাসন করিতে ছটিতেন; কিন্তু বাপের পায়ে ছিল বাত, আর ছেলেটি হরিণের মতো দৌড়িতে পারিত; কাজেই কিল চড় চাপড় সকল সময় ঠিক জায়গায় গিয়া পড়িত না। কিন্তু সুশীলচন্দ্র দৈবাৎ যেদিন ধরা পড়িতেন, সেদিন তাঁহার আর রক্ষা থাকিত না। আজ শনিবারের দিনে দটোর সময় স্কুলের ছয়টি ছিল, কিন্তু আজ স্কুলে যাইতে সশীলের কিছুতেই মন উঠিতেছিল না। তাহার অনেকগলো কারণ ছিল। একে তো আজ স্কুলে ভূগোলের পরীক্ষা, তাহাতে আবার ও পাড়ার বোসেদের বাড়ি আজ সন্ধ্যার সময় বাজি পোড়ানো হইবে। সকাল হইতে সেখানে ধুমধাম চলিতেছে । সশীলের ইচ্ছা, সেইখানেই আজ দিনটা কাটাইয়া দেয়। অনেক ভাবিয়া, শেষকালে স্কুলে যাইবার সময বিছানায় গিয়া শুইযা পড়িল । তাহার বাপ সবল গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কণী রে, বিছানায় পড়ে আছিস যে । আজ ইস্কুলে যাবি নে ?” সশীল বলিল, “আমার পেট কামডাচ্ছে, আজ আমি ইস্কুলে যেতে পারব না।” সবল তাহার মিথ্যা কথা সমস্ত কঝিতে পারিলেন। মনে মনে বলিলেন, রোসো, একে আজ জবদ করতে হবে । এই বলিয়া কহিলেন, “পেট কামড়াচ্ছে ? তবে আর তোর কোথাও গিয়ে কাক্ত নেই। বোসেদের বাড়ি বাজি দেখতে হরিকে একলাই পাঠিয়ে দেব এখন । তোর জন্যে আজ লজঞ্জসে কিনে রেখেছিলাম, সেও আজ থেয়ে কাজ নেই। তুই এখানে চুপ করে পড়ে থাক, আমি খানিকটা পাঁচন তৈরি করে নিয়ে আসি।” এই বলিয়া তাহার ঘরে শিকল দিয়া সবলচন্দ্র খসে তিতো পাঁচন তৈযার করিয়া আনিতে গেলেন। সশীল মহা মুশকিলে পড়িয়া গেল। লজ্ঞস সে যেমন ভালোবাসিত পাঁচন খাইতে হইলে তাহার তেমনি সব নাশ বোধ হইত। ও দিকে আবার বোসেদের বাড়ি যাইবার জন্য কাল রাত হইতে তাহার মন ছটফট করিতেছে, তাহাও বুঝি বন্ধ হইল। সবলবাব যখন খাব বড়ো এক বাটি পাঁচন লইয়া ঘরে ঢাকিলেন সশীল বিছানা হইতে ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া বলিল, “আমার পেট কামড়ানো একেবারে সেরে গেছে, আমি আজ ইস্কুলে যাব।” বাবা বলিলেন, “না না, সে কাজ নেই, তুই পাঁচন খেয়ে এইখানে চুপচাপ করে শয়ে থাক।” এই বলিয়া তাহাকে জোর স্বরিয়া পাঁচন খাওয়াইয়া ঘরে তালা লাগাইয়া বাহির হইয়া গেলেন। সশীল বিছানায় পড়িয়া কাঁদিতে কাঁদিতে সমস্তদিন ধরিয়া কেবল মনে করিতে লাগিল যে, আহা, যদি কালই আমার বাবার মতো বয়স হয়, আমি যা ইচ্ছে তাই