পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইচ্ছাপারণ ළු8ළු করতে পারি, আমাকে কেউ বন্ধ করে রাখতে পারে না। তাহার বাপ সবলবাব বাহিরে একলা বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন যে, আমার বাপ মা আমাকে বড়ো বেশি আদর দিতেন বলেই তো আমার ভালোরকম পড়াশুনো কিছ হল না । আহা, আবার যদি সেই ছেলেবেলা ফিরে পাই তা হলে আর কিছুতেই সময় নষ্ট না করে কেবল পড়াশুনো করে নিই। ইচ্ছাঠাকরন সেই সময় ঘরের বাহির দিয়া বাইতেছিলেন। তিনি বাপের ও ছেলের মনের ইচ্ছা জানিতে পারিয়া ভাবিলেন, আচ্ছা, ভালো, কিছুদিন ইহাদের ইচ্ছা পণ করিয়াই দেখা যাক । এই ভাবিয়া বাপকে গিয়া বলিলেন, “তোমার ইচ্ছা পণ হইবে। কাল হইতে তুমি তোমার ছেলের বয়স পাইবে।” ছেলেকে গিয়া বলিলেন, “কাল হইতে তুমি তোমার বাপের বয়সী হইবে।” শনিয়া দুইজনে ভারি খুশি হইয়া উঠিলেন। বন্ধ সুবলচন্দ্র রাত্রে ভালো ঘামাইতে পারিতেন না, ভোরের দিকটায় ঘমোইতেন। কিন্তু আজ তাঁহার কী হইল, হঠাৎ খুব ভোরে উঠিয়া একেবারে লাফ দিয়া বিছানা হইতে নামিযা পড়িলেন। দেখিলেন, খুব ছোটো হইয়া গেছেন ; পড়া দাঁত সবগুলি উঠিয়াছে ; মুখের গোঁফদাড়ি সমস্ত কোথায় গেছে, তাহার আর চিহ্ন নাই। রাত্রে যে ধতি এবং জামা পরিয়া শইষাছিলেন, সকালবেলায় তাহা এত ঢিলা হইয়া গেছে যে, হাতের দুই আস্তিন প্রায় মাটি পর্যন্ত ঝলিয়া পড়িয়াছে, জামার গলা বকে পর্যন্ত নাবিয়াছে, ধতির কোঁচটা এতই লন্টাইতেছে যে, পা ফেলিয়া চলাই দায়। আমাদের সশীলচন্দ্র অন্যদিন ভোরে উঠিয়া চারি দিকে দৌরাত্মা করিয়া বেড়ান, কিন্তু আজ তাহার ঘমে আর ভাঙে না : যখন তাহার বাপ সবলচন্দ্রের চে'চামেচিতে সে জাগিয়া উঠিল, তখন দেখিল, কাপড়চোপড়গুলো গায়ে এমনি অটিয়া গেছে যে, ছিাড়িয়া ফাটিয়া কুটিকুটি হইবার জে হইয়াছে : শরীরটা সমস্ত বাড়িয়া উঠিয়াছে: কাঁচা-পাকা গোঁফ-দাড়িতে অধোকটা মুখ দেখাই যায় না ; মাথায় একমাথা চুল ছিল, হাত দিয়া দেখে, সামনে চুল নাই— পরিকার টাক তক তক করিতেছে। আজ সকালে সশীলচন্দ্র বিছানা ছাড়িয়া উঠিতেই চায় না। অনেকবার তুড়ি দিয়া উচ্চৈঃস্বরে হাই তুলিল ; অনেকবার এপাশ-ওপাশ করিল ; শেষকালে বাপ সবেলচন্দ্রের গোলমালে ভারি বিরক্ত হইয়া উঠিয়া পড়িল । দুইজনের মনের ইচ্ছা পাপ হইল বটে, কিন্তু ভারি মুশকিল বাধিয়া গেল । আগেই বলিয়াছি, সুশীলচন্দ্র মনে করিত যে, সে যদি তাহার বাবা সবলচন্দ্রের মতো বড়ো এবং স্বাধীন হয়, তবে যেমন ইচ্ছা গাছে চড়িয়া, জলে কপি দিয়া, কাঁচা আম থাইয়া, পাখির বাচ্ছা পাড়িয়া, দেশময় ঘরিয়া বেড়াইবে : যখন ইচ্ছা ঘরে আসিয়া যাহা ইচ্ছা তাহাই খাইবে, কেহ বারণ করিবার থাকিবে না। কিন্তু আশ্চর্য এই সেদিন সকালে উঠিয়া তাহার গাছে চড়িতে ইচ্ছাই হইল না। পানাপুকুরটা দেখিয়া তাহার মনে হইল, ইহাতে ঝাঁপ দিলেই আমার কাঁপানি দিয়া জর আসিবে। চুপচাপ করিয়া দাওয়ায় একটা মাদরে পাতিয়া বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল। একবার মনে হইল, খেলাধালোগুলো একেবারেই ছাড়িয়া দেওয়াটা ভালো হয় না, একবার চেষ্টা করিয়াই দেখা যাক। এই ভাবিয়া, কাছে একটা আমড়া গাছ ছিল, সেইটাতে উঠিবার জন্য অনেকরকম চেষ্টা করিল। কাল ৰে গাছটাতে কাঠবিড়ালির