পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দরাশা ෆ6), দেবালয়, ধপধনার ধর্ম, অগরচন্দনমিশ্রিত পপরাশির সুগন্ধ, যোগীসন্ন্যাসীর অলৌকিক ক্ষমতা, ব্রাহণের অমানষিক মাহাত্ম্য, মানষে-ছদ্মবেশধারী দেবতাদের বিচিত্রলীলা, সমস্ত জড়িত হইয়া আমার নিকটে এক অতি পরাতন, অতি বিস্তীপ, অতি সদের অপ্রাকৃত মায়ালোক সজন করিত, আমার চিত্ত যেন নাঁড়হারা ক্ষুদ্র পক্ষীর ন্যায় প্রদোষকালের একটি প্রকাণ্ড প্রাচীন প্রাসাদের কক্ষে কক্ষে উড়িরা উড়িয়া বেড়াইত। হিন্দসংসার আমার বালিকাহদয়ের নিকট একটি পরমরমণীয় রপেকথার বাজ্য ছিল। এমনসময় কোম্পানিবাহাদরের সহিত সিপাহিলোকের লড়াই বাধিল । আমাদের বন্দ্রাওনের ক্ষুদ্র কেল্লাটির মধ্যেও বিপ্লবের তরঙ্গ জাগিয়া উঠিল। কেশরলাল বলিল, এইবার গো-খাদক গোরালোককে আযাবত হইতে দরে করিয়া দিয়া আর-একবার হিন্দপথানে হিন্দমসেলমানে রাজপদ লইয়া দাতন্ত্রীড়া বসাইতে হইবে।” আমার পিতা গোলামকাদের খাঁ সাবধানী লোক ছিলেন ; তিনি ইংরাজ জ্ঞাতিকে কোনো-একটি বিশেষ কুটবে-সম্পভাষণে অভিহিত করিয়া বলিলেন, “উহারা অসাধ্য সাধন করিতে পারে, হিন্দুস্থানের লোক উহাদের সহিত পারিয়া উঠিবে না । আমি অনিশ্চিত প্রত্যাশে আমার এই ক্ষুদ্র কেল্লাটুকু খোয়াইতে পারিব না, আমি কোপানিবাহাদরের সহিত লড়িব না।’ যখন হিন্দুস্থানের সমস্ত হিন্দমসেলমানের রক্ত উত্তপ্ত হইয়া উঠিয়াছে, তখন আমার পিতার এই বণিকের মতো সাবধানতায় আমাদের সকলের মনেই ধিক্কার উপস্থিত হইল। আমার বেগম মাতৃগণ পর্যন্ত চঞ্চল হইয়া উঠিলেন। এমন সময়ে ফৌজ লইয়া সশস্ট কেশরলাল আসিয়া আমার পিতাকে বলিলেন, নবাবসাহেব, আপনি যদি আমাদের পক্ষে যোগ না দেন তবে যতদিন লড়াই চলে আপনাকে বন্দী রাখিয়া আপনার কেল্লার আধিপত্যভার আমি গ্রহণ করিব।” পিতা বলিলেন, সে-সমস্ত হাঙ্গামা কিছুই করিতে হইবে না, তোমাদের পক্ষে আমি রহিল।" কেশরলাল কহিলেন, ধনকোষ হইতে কিছু অৰ্থ বাহির করিতে হইবে।” পিতা বিশেষ কিছু দিলেন না : কহিলেন, যখন যেমন আবশ্যক হইবে আমি দিব । আমার সীমন্ত হইতে পদাঙ্গলি পৰ্যন্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যতকিছু ভূষণ ছিল সমস্ত কাপড়ে বধিয়া আমার হিন্দ দাসী দিয়া গোপনে কেশরলালের নিকট পাঠাইয়া দিলাম। তিনি গ্রহণ করিলেন। আনন্দে আমার ভূষণবিহীন প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পলকে বামাঞ্চিত হইয়া উঠিল । কেশরলাল মরিচাপড়া বন্দকের চোপ্ত এবং পরাতন তলোয়ারগুলি মাজিয়া ঘষিয়া সাফ করিতে প্রস্তুত হইলেন, এমনসময় হঠাৎ একদিন অপরাহ্লে জিলার কমিশনারসাহেব লালকৃতি গোবা লইয়া আকাশে ধলো উড়াইয়া আমাদের কেল্লার মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। আমার পিতা গোলামকাদের খাঁ গোপনে তাঁহাকে বিদ্রোহ-সংবাদ দিয়াছিলেন । বল্লাওনের ফৌজের উপর কেশরলালের এমন একটি অলৌকিক আধিপত্য ছিল যে, তাহার কথায় তাহারা ভাঙা বন্দকে ও ভোঁতা তরবারি হতে লড়াই করিয়া মরিতে