পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দরাশা もう○○ মছিতপ্রায় হইয়া চক্ষে অন্ধকার দেখিতে লাগিলাম। তখন আমি ষোড়শী, প্রথম দিন অন্তঃপর হইতে বাহিরে আসিয়াছি, তখনও বহিরাকাশের লব্ধ তপত সন্যকর আমার স্কুমার কপোলের রন্তিম লাবণ্যবিভা অপহরণ করিয়া লয় নাই, সেই বহিঃসংসারে পদক্ষেপ করিবামাত্র সংসারের নিকট হইতে, আমার সংসারের দেবতার নিকট হইতে এই প্রথম সম্পভাষণ প্রাপ্ত হইলাম।” আমি নিবাপিত-সিগারেটে এতক্ষণ মোহমন্ধে চিত্রাপিতের ন্যায় বসিয়া ছিলাম। গল্প শুনিতেছিলাম কি ভাষা শুনিতেছিলাম কি সংগীত শনিতেছিলাম জানি না, আমার মুখে একটি কথা ছিল না। এতক্ষণ পরে আমি আর থাকিতে পারিলাম না, হঠাৎ বলিয়া উঠিলাম, “জানোয়ার।” নবাবজাদী কহিলেন, “কে জানোয়ার ; জানোয়ার কি মৃত্যুযন্ত্রণার সময় মুখের নিকট সমাহত জলবিন্দর পরিত্যাগ করে।” আমি অপ্রতিভ হইয়া কহিলাম, “তা বটে। সে দেবতা।” নবাবজাদী কহিলেন, “কিসের দেবতা ! দেবতা কি ভক্তের একাগ্রচিত্তের সেবা প্রত্যাখ্যান করিতে পারে!” আমি বলিলাম, “তাও বটে।” বলিয়া চুপ করিয়া গেলাম। নবাবপত্রী কহিতে লাগিলেন, “প্রথমটা আমার বড়ো বিষম বাজিল। মনে হইল, বিশ্বজগৎ হঠাৎ আমার মাথার উপর চুরমার হইয়া ভাঙিয়া পড়িয়া গেল। মহোতের মধ্যে সংজ্ঞা লাভ করিয়া সেই কঠোর কঠিন নিষ্ঠর নিবিকার পবিত্র ব্রাহরণের পদতলে পর হইতে প্রণাম করিলাম--মনে মনে কহিলাম, হে ব্ৰাহরণ, তুমি হীনের সেবা, পরের অন্ন, ধনীর দান, যাবতীর যৌবন, রমণীর প্রেম কিছুই গ্রহণ কর না ; তুমি স্বতন্ত্র, তুমি একাকী, তুমি নিলিপিত, তুমি সদর, তোমার নিকট আত্মসমপণ করিবার অধিকারও আমার নাই! নবাবদ হিতাকে ভুলাঠিতমস্তকে প্রণাম করিতে দেখিয়া কেশরলাল কী মনে করিল ললিতে পারি না, কিন্তু তাহার মুখে বিস্ময় অথবা কোনো ভাবান্তর প্রকাশ পাইল না। শান্তভাবে একবার আমার মুখের দিকে চাহিল: তাহার পর ধীরে ধীরে উঠিল । আমি সচকিত হইয়া আশ্রয় দিবার জন্য আমার হস্ত প্রসারণ করিলাম, সে তাহা নীরবে প্রত্যাখ্যান করিল এবং বহন কষ্টে যমনার ঘাটে গিয়া অবতীণ হইল। সেখানে একটি খেয়ানৌকা বাঁধা ছিল । পার হইবার লোকও ছিল না, পার করিবার লোকও ছিল না। সেই নৌকার উপর উঠিয়া কেশরলাল বাঁধন খলিয়া দিল, নৌকা দেখিতে পখিতে মধাম্রোতে গিয়া ক্রমশ আদশা হইয়া গেল— আমার ইচ্ছা হইতে লাগিল, সমস্ত সদয়ভার, সমস্ত যৌবনভার, সমস্ত অনাদত ভক্তিভার লইয়া সেই অদশ্য নৌকার অভিমুখে জোড়কর করিয়া সেই নিস্তৰ নিশীথে সেই চন্দ্রালোকপালকিত নিস্তরঙ্গ ধমনার মধ্যে অকালবন্তচু্যত পম্পেমঞ্জরীর ন্যায় এই ব্যথ জীবন বিসর্জন করি। কিন্তু পারিলাম না। আকাশের চন্দ্র, যমনাপারের ঘনকৃষ্ণ বনরেখা, কালিন্দীর নিবিড় নীল নিকাপ জলরাশি, দরে আম্রবনের উধ্যে আমাদের জোৎস্নাচিকণ কেল্লার ১ড়াগ্রভাগ, সকলেই নিঃশব্দগম্ভীর ঐকতানে মৃত্যুর গান গাহিল; সেই নিশীথে গ্রহচন্দ্রতায়াখচিত নিস্তদ্ধ তিন ভুবন আমাকে একবাক্যে মরিতে কহিল। কেবল