পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○W O গল্পগুচ্ছ লাভ করিয়াছে, তাহার স্বামীর পারলৌকিক সদ্গতি তাহার গভে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে। এই ঘটনার পর দশ বৎসর অতীত হইয়া গেল । ইতিমধ্যে বৈদ্যুনাথের বৈষয়িক অবস্থার প্রচুর উন্নতি হইয়াছে। এখন তিনি পল্লীগ্রাম ছাড়িয়া কলিকাতায় বৃহৎ বাড়ি কিনিয়া বাস করিতেছেন। কিন্তু তাঁহার বিষয় যতই বধি হইল বিষয়ের উত্তরাধিকারীর জন্য প্রাণ ততই ব্যাকুল হইয়া উঠিতে লাগিল । পরে পরে দইবার বিবাহ করিলেন, তাহাতে পত্র না জন্মিয়া কেবলি কলহ জমিতে লাগিল। দৈবজ্ঞপণ্ডিতে সন্ন্যাসী-অবধতে ঘর ভরিয়া গেল; শিকড় মাদলি জলপড়া এবং পেটেণ্ট ঔষধের বর্ষণ হইতে লাগিল। কালীঘাটে যত ছাগশিশ মরিল তাহার অস্থিতিপে তৈমুরলঙ্গের কঙ্কালজয়স্তম্ভ ধিককুত হইতে পারিত; কিন্তু তব কেবল গুটিকতক অস্থি ও অতি স্বল্প মাংসের একটি ক্ষদ্রতম শিশও বৈদ্যনাথের বিশাল প্রাসাদের প্রান্তস্থান অধিকার করিয়া দেখা দিল না। তাঁহার অবতমানে পরের ছেলে কে তাঁহার অন্ন খাইবে ইহাই ভাবিয়া অন্নে তাঁহার অরুচি জন্মিল । বৈদ্যনাথ আরও একটি সত্ৰী বিবাহ করিলেন– কারণ, সংসারে আশারও অন্ত নাই, কন্যাদায়গ্রস্তের কন্যারও শেষ নাই । দৈবজ্ঞেরা কোঠী দেখিয়া বলিল, ঐ কন্যার পত্রস্থানে যেরপে শভেযোগ দেখা যাইতেছে তাহাতে বৈদ্যনাথের ঘরে প্রজাবন্ধির আর বিলম্বব নাই ; তাহার পরে ছয় বৎসর অতীত হইয়া গেল তথাপি পত্রপথানের শভেযোগ আলস্য পরিত্যাগ করিলেন না। বৈদ্যনাথ নৈরাশ্যে অবনত হইয়া পড়িলেন। অবশেষে শাস্যজ্ঞ পণ্ডিতের পরামশে একটা প্রচুরব্যয়সাধ্য যজ্ঞের আয়োজন করিলেন, তাহাতে বহ কাল ধরিয়া বহন ব্রাহণের সেবা চলিতে লাগিল। এ দিকে তখন দেশব্যাপী দুভিক্ষে বঙ্গ বিহার উড়িষ্যা অস্থিচমাসার হইয়া উঠিয়াছিল। বৈদ্যনাথ যখন অন্নের মধ্যে বসিয়া ভাবিতেছিলেন, আমার অন্ন কে খাইবে, তখন সমস্ত উপবাসী দেশ আপন রিক্তপথালীর দিকে চাহিয়া ভালিতেছিল, কণী খাইব । ঠিক সেই সময়ে চারিমাস কাল ধরিয়া বৈদ্যনাথের চতুর্থ সহধর্মিণী একশত ব্রাহরণের পাদোদক পান করিতেছিল এবং একশত ব্ৰাহয়ণ প্রাতে প্রচুর অন্ন এবং সায়াহে অপৰ্যাপ্ত পরিমাণে জলপান খাইয়া খরি সরা ভাঁড় এবং দধিঘতলিপন্ত কলার পাতে মানিসিপালিটির আবর্জনাশকট পরিপণ করিয়া তুলিতেছিল। অলের গন্ধে দভিক্ষকাতর বনভূক্ষ্যগণ দলে দলে বারে সমাগত হইতে লাগিল, তাহাদিগকে সব দা খেদাইয়া রাখিবার জন্য অতিরিক্ত বারী নিযুক্ত হইল। একদিন প্রাতে বৈদ্যুনাথের মাবল-মণ্ডিত দালানে একটি স্থলোদর সন্ন্যাসী দইসের মোহনভোগ এবং দেড়সের দধে -সেবায় নিযন্তে আছে, বৈদ্যনাথ গায়ে একখানি চাদর দিয়া জোড়করে একান্ত বিনীতভাবে ভূতলে বসিয়া ভক্তিভরে পবিত্র ভোজনব্যাপার নিরীক্ষণ করিতেছিলেন, এমনসময় কোনোমতে বারীদের দটি এড়াইয়া জীণদেহ বালক-সহিত একটি অতি শীর্ণকায়া রমণী গহে প্রবেশ করিয়া ক্ষীণ স্বরে