পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডিটেকটিভ ○も○ গৌরববিহীন প্রাণীদের জন্য হইয়াছিল– তোদের না আছে উদার কল্পনাশন্তি, না আছে কঠোর আত্মসংযম, তোরা বেটারা খনী হইবার পধা করিস ! আমি কল্পনাচক্ষে যখন লণ্ডন এবং প্যারিসের জনাকীর্ণ পথের দুই পাশেব শীতবাপাকুল অভ্ৰভেদী হম"শ্রেণী দেখিতে পাইতাম তখন আমার শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিত। মনে মনে ভাবিতাম, এই হম'রাজি এবং পথ-উপপথের মধ্য দিয়া যেমন জনস্রোত কমস্রোত উংসবস্রোত সৌন্দয স্রোত অহরহ বহিয়া যাইতেছে, তেমনি সবাই একটা হিংস্ৰকুটিল কৃষ্ণকুঞ্চিত ভয়ংকর অপরাধপ্রবাহ তলে তলে আপনার পথ করিয়া চলিয়াছে; তাহারই সমীপ্যে য়রোপীয় সামাজিকতার হাস্যকৌতুক শিষ্টাচার এমন বিরাটভীষণ রমণীয়তা লাভ করিয়াছে । আর, আমাদের কলিকাতার পথপাশেবর মন্তপাতায়ন গহশ্রেণীর মধ্যে রান্নাবাটনা, গহকাষ, পরীক্ষার পাঠ, তাসদবার বৈঠক, দাম্পত্যকলহ, বড়োজোর ভ্রাতৃবিচ্ছেদ এবং মকদ্দমার পরামর্শ ছাড়া বিশেষ কিছু নাই— কোনো-একটা বাড়ির দিকে চাহিয়া কখনও এ কথা মনে হয় না যে, হয়তো এই মহেতেই এই গ্রহের কোনো-একটা কোণে সয়তান মুখ গজিয়া বসিয়া আপনার কালো কালে ডিমগুলিতে তা দিতেছে। আমি অনেকসময়ই রাস্তায় বাহির হইয়া পথিকদের মুখ এবং চলনের ভাব” পর্যবেক্ষণ করিতাম : ভাবে ভঙ্গিতে যাহাদিগকে কিছুমাত্র সন্দেহজনক বোধ হইয়াছে আমি অনেকসময়ই গোপনে তাহাদের অনুসরণ করিয়াছি, তাহাদের নামধাম ইতিহাস অনুসন্ধান করিয়াছি, অবশেষে পরম নৈরাশোর সহিত আবিস্কার করিয়াছি- তাহারা নকলক ভালোমানুষ, এমনকি তাহাদের আত্মীয়-বান্ধবেরাও তাহাদের সম্বন্ধে আড়ালে কোনোপ্রকার গরে্তর মিথ্যা অপবাদও প্রচার করে না । পথিকদের মধ্যে সবচেয়ে যাহাকে পাষণ্ড বলিয়া মনে হইয়াছে, এমনকি যাহাকে দেখিয়া নিশ্চয় মনে করিয়াছি যে, এইমাত্র সে কোনো-একটা উৎকট দকোষ সাধন করিয়া আসিয়াছে, সন্ধান করিয়া জানিয়াছি – সে একটি ছাত্রবৃত্তি স্কুলের দ্বিতীয় পণ্ডিত, তখনই অধ্যাপনকাষ’ সমাধা করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিতেছে । এই-সকল লোকেরাই অন্য-কোনো দেশে জন্মগ্রহণ করিলে বিখ্যাত চোরডাকতে হইয়া উঠিতে পারিত, কেবলমাত্র যথোচিত জীবনীশক্তি এবং যথেষ্ট পরিমাণ পৌরুষের অভাবেই আমাদের দেশে ইহারা কেবল পণ্ডিতি করিয়া বন্ধবয়সে পেন্সন লইয়া মরে বহর চেষ্টা ও সন্ধানের পর এই লিতীয় পণ্ডিতটার নিরীহতার প্রতি আমার ষেরাপ সুগভীর অশ্রদ্ধা জমিয়াছিল কোনো অতিক্ষুদ্র ঘটিবাটিচোরের প্রতি তেমন হয় নাই । অবশেষে একদিন সন্ধাবেলায় আমাদেরই বাসার অনতিদারে একটি গ্যাসপোস্টের নীচে একটা মানুষ দেখিলাম, বিনা আবশ্যকে সে উৎসকভাবে একই স্থানে ঘুরিতেছে ফিরিতেছে । তাহাকে দেখিয়া আমার সন্দেহমান্ত রহিল না ষে, সে একটি-কোনো গোপন -ুরভিসন্ধির পশ্চাতে নিযন্তে রহিয়াছে। নিজে অন্ধকারে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া তাহার ’চহারাখানা বেশ ভালো করিয়া দেখিয়া লইলাম– তরুণ বয়স, দেখিতে সশ্রী; আমি মনে মনে কহিলাম, কেম' করিবার এই তো ঠিক উপযন্ত চেহারা; নিজের মুখশ্রীই মহাদের সব প্রধান বিরধে সাক্ষী তাহারা যেন সব প্রকার অপরাধের কাজ সব যত্নে পরিহার করে ; সংকায করিয়া তাহারা নিম্ফল হইতে পারে কিন্তু দকিম বারা সফলতা লাভও তাহদের পক্ষে দরোশা। দেখিলাম, এই ছোকরাটির চেহারাটাই ইহার