পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ථV8 গল্পগুচ্ছ সব প্রধান বাহাদরি; সেজন্য আমি মনে মনে অনেকক্ষণ ধরিয়া তাহার তারিফ করিলাম, বলিলাম, ভগবান তোমাকে যে দলভ সুবিধাটি দিয়াছেন সেটাকে রীতিমত কাজে খাটাইতে পার, তবে তো বলি সাবাস । আমি অন্ধকার হইতে তাহার সম্মখে আসিয়াই পঠে চপেটাঘাতপবেক বলিলাম, “এই যে, ভালো আছেন তো?” সে তৎক্ষণাৎ প্রবলমাত্রায় চমকিয়া উঠিয়া একেবারে ফ্যাকাসে হইয়া উঠিল। আমি কহিলাম, “মাপ করিবেন, ভুল হইয়াছে, হঠাৎ আপনাকে অন্য লোক ঠাওরাইয়াছিলাম।” মনে করিলাম, কিছলমাত্র ভুল করি নাই, যাহা ঠাওরাইয়াছিলাম তাই বটে। কিন্তু এতটা অধিক চমকিয়া ওঠা তাহার পক্ষে অনুপযন্ত হইয়াছিল, ইহাতে আমি কিছু ক্ষম হইলাম। নিজের শরীরের প্রতি তাহার আরও অধিক দখল থাকা উচিত ছিল; কিন্তু শ্রেষ্ঠতার সম্পণে আদশ অপরাধীশ্রেণীর মধ্যেও বিরল। চোরকেও সেরা চোর করিয়া তুলিতে প্রকৃতি কৃপণতা করিয়া থাকে। অন্তরালে আসিয়া দেখিলাম, সে বসতভাবে গ্যাসপোস্ট ছাড়িয়া চলিয়া গেল। পিছনে পিছনে গেলাম, দেখিলাম, গোলদিঘির মধ্যে প্রবেশ করিয়া পঙ্করিণীতীরে তৃণশয্যার উপর চিত হইয়া শ্যইয়া পড়িল ; আমি ভাবিলাম, উপাযচিন্তার এ একটা সথান বটে, গ্যাসপোস্টের তলদেশের অপেক্ষা অনেকাংশে ভালো— লোকে যদি কিছ সন্দেহ করে তো বড়োজোর এই ভাবিতে পারে যে, ছোকরাটি অন্ধকার আকাশে প্রেয়সীর মুখচন্দ্র অঙ্কিত করিয়া কৃষ্ণপক্ষ রাত্রির অভাব পরেণ করিতেছে। ছেলেটির প্রতি উত্তরোত্তর আমার চিত্ত আকৃষ্ট হইতে লাগিল । অনুসন্ধান করিয়া তাহার বাসা জানিলাম । মন্মথ তাহার নাম, সে কলেজের ছাত্র, পরীক্ষা ফেল করিয়া গ্রীমাবকাশে ঘুরিয়া ঘরিয়া বেড়াইতেছে, তাহার বাসার সহবাসী ছাত্রগণ সকলেই আপন আপন বাড়ি চলিয়া গেছে। দীঘ* অবকাশকালে সকল ছাত্রই বাসা ছাড়িয়া পালায়, এই লোকটিকে কোন দুষ্টগ্রহ ছয়টি দিতেছে না সেটা বাহির করিতে কৃতসংকল্প হইলাম। আমিও ছাত্র সাজিয়া তাহার বাসার এক অংশ গ্রহণ করিলাম। প্রথম দিন যখন সে আমাকে দেখিল, কেমন একরকম করিয়া সে আমার মুখের দিকে চাহিল তাহার ভাবটা ভালো বুঝিলাম না। যেন সে বিস্মিত, যেন সে আমার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়াছে, এমনি একটা ভাব। বুঝিলাম, শিকারীর উপযুক্ত শিকার বটে, ইহাকে সোজাভাবে ফস করিয়া কায়দা করা যাইবে না। অথচ যখন তাহার সহিত প্রণয়বন্ধনের চেষ্টা করিলাম তখন সে ধরা দিতে কিছমাত্র বিধা করিল না। কিন্তু মনে হইল, সেও আমাকে সতীক্ষ। দটিতে দেখে, সেও আমাকে চিনিতে চায়। মনুষ্যচরিত্রের প্রতি এইরুপ সদাসতক সজাগ কৌতুহল ইহা ওস্তাদের লক্ষণ। এত অলপ বয়সে এতটা চাতুরী দেখিয়া বড়ো খুশি হইলাম। মনে ভাবিলাম, মাঝখানে একজন রমণী না আনিলে এই অসাধারণ অকালধত ছেলেটির হৃদয়বার উদ্ঘাটন করা সহজ হইবে না। একদিন গদগদকণ্ঠে মন্মথকে বলিলাম, “ভাই, একটি সীলোককে আমি ভালোবাসি, কিন্তু সে আমাকে ভালোবাসে না।” প্রথমটা সে যেন কিছু চকিতভাবে আমার মুখের দিকে চাহিল, তাহার পর ঈষৎ হাসিয়া কহিল, “এরপ দংযোগ বিরল নহে। এইপ্রকার মজা করিবার জন্যই কৌতুকপর