পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডিটেকটিভ ○も○。 বিধাতা নরনারীর প্রভেদ করিয়াছেন।” আমি কহিলাম, ”তোমার পরামর্শ ও সাহায্য চাহি ।” সে সম্মত হইল। আমি বানাইয়া বানাইয়া অনেক ইতিহাস কহিলাম ; সে সাগ্রহে কৌতুহলে সমস্ত কথা শুনিল, কিন্তু অধিক কথা কহিল না। আমার ধারণা ছিল, ভালোবাসার, বিশেষত গহিত ভালোবাসার, ব্যাপার প্রকাশ করিয়া বলিলে মানুষের মধ্যে অন্তরগতা দ্রুত বাড়িয়া উঠে; কিন্তু বৰ্তমান ক্ষেত্রে তাহার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না, ছোকরাটি পবোপেক্ষা যেন চুপ মারিয়া গেল, অথচ সকল কথা যেন মনে গাঁথিয়া লইল । ছেলেটির প্রতি আমার ভক্তির সীমা রহিল না। এ দিকে মন্মথ প্রত্যহ গোপনে বার রোধ করিয়া কী করে, এবং তাহার গোপন অভিসন্ধি কিরাপে কতদর অগ্রসর হইতেছে আমি তাহার ঠিকানা করিতে পারিলাম না, অথচ অগ্রসর হইতেছিল তাহার সন্দেহ নাই। কী একটা নিগঢ়ে ব্যাপারে সে বাপত আছে এবং সম্প্রতি সেটা অত্যন্ত পরিপক্ক হইয়াছে, তাহা এই নবযুবকটির মুখ দেখিবামাত্র বুঝা যাইত। আমি গোপন চাবিতে তাহার ডেসক খালিয়া দেখিয়াছি, তাহাতে একটা অত্যন্ত দরবোধ কবিতার খাতা, কলেজের বস্তৃতার নোট এবং বাড়ির লোকের গোটাকতক অকিঞ্চিৎকর চিঠি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় নাই। কেবল বাড়ির চিঠি হইতে এই প্রমাণ হইয়াছে যে, বাড়ি ফিরিবার জন্য আত্মীয়স্বজন বারবার প্রবল অনুরোধ করিয়াছে ; তথাপি, তৎসত্ত্বেও বাড়ি না যাইবার একটা সংগত কারণ অবশ্য আছে ; সেটা যদি ন্যায়সংগত হইত। তবে নিশ্চয় কথায় কথায় এতদিনে ফাঁস হইত, কিন্তু তাহার সম্পণে বিপরীত হইবার সম্পভাবনা থাকাতেই এই ছোকরাটির গতিবিধি এবং ইতিহাস আমার কাছে এমন নিরতিশয় ঔৎসক্যেজনক হইয়াছে—যে অসামাজিক মনুষ্যসম্প্রদায় পাতালতলে সম্পণে আত্মগোপন করিয়া এই বহৎ মনুষ্যসমাজকে সবাদাই নীচের দিক হইতে দোলায়মান করিয়া রাখিয়াছে, এই বালকটি সেই বিশ্বব্যাপী বহন পুরাতন বহৎজাতির একটি অঙ্গ, এ সামান্য একজন স্কুলের ছাত্র মহে ; এ জগৎবক্ষবিহারিণী সব নাশিনীর একটি প্রলয়সহচর ; আধুনিককালের চশমাপরা নিরীহ বাঙালি ছাত্রের বেশে কলেজের পাঠ অধ্যয়ন করিতেছে, নমণ্ডেধারী কাপালিক বেশে ইহার ভৈরবতা আমার নিকট আরও ভৈরবতর হইত না ; আমি ইহাকে ভক্তি করি । অবশেষে সশরীরে রমণীর অবতারণা করিতে হইল। পলিসের বেতনভোগী হরিমতি আমার সহায় হইল। মন্মথকে জানাইলাম, আমি এই হরিমতির হতভাগ্য প্রণয়াকাঙ্ক্ষী, ইহাকে লক্ষ্য করিয়াই আমি কিছুদিন গোলদিঘির ধারে মন্মথের পাশ্বচর হইয়; আবার গগনে কেন সুধাংশু-উদয় রে’ কবিতাটি বারবার আবত্তি করিলাম: এবং হরিমতিও কতকটা অন্তরের সহিত, কতকটা লীলাসহকারে জানাইল যে, তাহার চিত্ত সে মন্মথকে সমপণ করিয়াছে। কিন্তু আশানরাপ ফল হইল না, মন্মথ সদর নিলি"ত অবিচলিত কৌতুহলের সহিত সমস্ত পর্যবেক্ষণ করিতে লাগিল। এমনসময় একদিন মধ্যাহ্নে তাহার ঘরের মেজেতে একখানি চিঠির গুটিকতক ছিন্নাংশ কৃড়াইয়া পাইলাম। জোড়া দিয়া দিয়া এই অসম্পণে বাক্যটুকু আদায় করিলাম, "আজ সন্ধ্যা সাতটার সময় গোপনে তোমার বাসায়”—অনেক খুজিয়া আর কিছ: বাহির করিতে পারিলাম না। আমার অন্তঃকরণ পলেকিত হইয়া উঠিল; মাটির মধ্য হইতে কোনো বিলুপ্তবংশ ૨8