পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অধ্যাপক ළුණූ A পাঁচসাত দিন পরে একে একে উত্তরগুলি দৈবাগত ব্ৰহমাসের ন্যায় আমার মনে উদয় হইতে লাগিল; কিন্তু শত্রপেক্ষ সম্মখে উপস্থিত না থাকাতে সে অস্ত্রগুলি আমাকেই বিধিয়া মারিল। ভাবিতাম, এ কথাগুলো অন্তত আমার ক্লাসের ছাত্রদিগকে শনাইয়া দিব। কিন্তু উত্তরগুলি আমার সহাধ্যায়ী গদভদিগের বৃদ্ধির পক্ষে কিছু অতিমার সক্ষম ছিল। তাহারা জানিত, চুরিমাত্রেই চুরি ; আমার চুরি এবং অন্যের চুরিতে যে কতটা প্রভেদ আছে তাহা বুঝিবার সামথ্য যদি তাহাদের থাকিত তবে আমার সহিতও তাহাদের বিশেষ প্রভেদ থাকিত না। বি-এ পরীক্ষা দিলাম, পরীক্ষায় উত্তীণ হইতে পারিব তাহাতেও আমার সন্দেহ ছিল না; কিন্তু মনে আনন্দ রহিল না। বামাচরণের সেই গুটিকতক কথার আঘাতে আমার সমস্ত খ্যাতি ও আশার অভ্ৰভেদী মন্দির ভগ্নস্তপ হইয়া পড়িল। কেবল আমার প্রতি অবোধ অমল্যের শ্রদ্ধা কিছুতেই হ্রাস হইল না; প্রভাতে যখন যশঃসন্য’ আমার সম্মুখে উদিত ছিল তখনও সেই শ্রদ্ধা অতি দীঘ ছায়ার ন্যায় আমার পদতললগ্ন হইয়া ছিল, আবার সায়াহ্নে যখন আমার যশঃসন্য অস্তোমুখ হইল তখনও সেই শ্রদ্ধা দীঘর্ণয়তন বিস্তার করিয়া আমার পদপ্রান্ত পরিত্যাগ করিল না । কিন্তু এ শ্রদ্ধায় কোনো পরিতৃপ্তি নাই, ইহা শান্য ছায়ামাত্র, ইহা মড় ভক্তহৃদয়ের মোহান্ধকার, ইহা বন্ধির উজ্জল রশিমপাত নহে। দ্বিতীয পরিচ্ছেদ বাবা বিবাহ দিবার জন্য আমাকে দেশ হইতে ডাকিয়া পাঠাইলেন। আমি কিছুদিন সময় লইলাম । বামাচরণবাবরে সমালোচনায় আমার নিজের মধ্যে একটা আত্মবিরোধ, নিজের প্রতি নিজের একটা বিদ্রোহভাব জন্মিয়াছিল । আমার সমালোচক অংশ আমার লেখক অংশকে গোপনে আঘাত দিতেছিল। আমার লেখক অংশ বলিতেছিল, আমি ইহার পরিশোধ লইব ; আবার একবার লিখিব এবং তখন দেখিব, আমি বড়ো না আমার সমালোচক বড়ো । মনে মনে স্থির করিলাম, বিশ্বপ্রেম, পরের জন্য আত্মবিসর্জন এবং শত্রকে মাজ’না — এই ভাবটি অবলম্বন করিয়া গদ্যে হউক পদ্যে হউক, খুব সাব্লাইম'-গোছের একটাকিছ লিখিব; বাঙালি সমালোচকদিগকে স্বহং সমালোচনার খোরাক জোগাইব । স্থির করিলাম, একটি সন্দের নিজন পথানে বসিয়া আমার জীবনের এই সব প্রধান কীতিটির সস্টিকাষ সমাধা করিব। প্রতিজ্ঞা করিলাম, অন্তত একমাসকাল বন্ধবোন্ধব পরিচিত-অপরিচিত কাহারও সহিত সাক্ষাৎ করিব না। অমলোকে ডাকিয়া আমার পল্যান বলিলাম। সে একেবারে স্তম্ভিত হইয়া গেল, সে যেন তখনই আমার ললাটে সবদেশের অনতিদরেবতী ভাবী মহিমার প্রথম অরণজ্যোতি দেখিতে পাইল। গভীর মুখে আমার হাত চাপিয়া ধরিয়া বিসফারিত নেত্র আমার মুখের প্রতি স্থাপন করিয়া মাদকবরে কহিল, “বাও ভাই, অমর কীতি অক্ষয় গৌরব অজ’ন করিয়া আইস।” আমার শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিল; মনে হইল, যেন আসন্নগৌরবগবিত ভক্তি