পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অধ্যাপক ෆඳා ෆ লিখিলাম। লেখনী এই অমর কীতিটি প্রসব করিবার পর আমি কলিকাতা-যাত্রার উদ্যোগ করিতে লাগিলাম। এমনসময় যাত্রায় ব্যাঘাত পড়িল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ একদিন অপরাহুে স্টেশনে না গিয়া অলসভাবে বাগানবাড়ির ঘরগুলি পরিদর্শন করিতেছিলাম। আবশ্যক না হওয়াতে ইতিপবে অধিকাংশ ঘরে পদাপণ করি নাই, বাহাবস্তু সম্বন্ধে আমার কৌতুহল বা অভিনিবেশ লেশমাত্র ছিল না। সেদিন নিতান্তই সময়ষাপনের উদ্দেশে বায়ভেরে উন্ডীন চু্যতপত্রের মতো ইতস্তত ফিরিতেছিলাম। উত্তরদিকের ঘরের দরজা খলিবামাত্র একটি ক্ষুদ্র বারান্দায় গিয়া উপস্থিত হইলাম। বারান্দার সমখেই বাগানের উত্তরসীমার প্রাচীরের গারসংলগ্ন দুইটি বহৎ জামের গাছ মুখামুখি করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। সেই দুইটি গাছের মধ্যবতী অবকাশ দিয়া আর-একটি বাগানের সদেীঘ বকুলবীথির কিয়দংশ দেখা যায়। কিন্তু সে-সমস্তই আমি পরে প্রত্যক্ষ করিয়াছিলাম, তখন আমার আর কিছুই দেখিবার অবসর হয় নাই; কেবল দেখিয়াছিলাম, একটি ষোড়শী যাবতী হাতে একখানি বই লইয়া মস্তক আনমিত করিয়া পদচারণা করিতে করিতে অধ্যয়ন করিতেছে। ঠিক সে সময়ে কোনোরাপ তত্ত্বালোচনা করিবার ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু কিছুদিন পরে ভাবিয়াছিলাম যে, দয্যন্ত বড়ো বড়ো বাণ শরাসন বাগাইয়া রথে চড়িয়া বনে মাগয়া করিতে আসিয়াছিলেন, মগ তো মরিল না, মাঝে হইতে দৈবাৎ দশমিনিটকাল গাছের আড়ালে দাঁড়াইয়া যাহা দেখিলেন, যাহা শুনিলেন, তাহাই তাঁহার জীবনে সকল দেখাশনার সেরা হইয়া দাঁড়াইল। আমিও পেন্সিল কলম এবং খাতাপর উদ্যত করিয়া কাব্যমগয়ায় বাহির হইয়াছিলাম, বিশ্বপ্রেম বেচারা তো পলাইয়া রক্ষা পাইল, আর আমি দুইটি জামগাছের আড়াল হইতে যাহা দেখিবার তাহা দেখিয়া লইলাম ; মানুষের একটা জীবনে এমন দুইবার দেখা যায় না। পথিবীতে অনেক জিনিসই দেখি নাই। জাহাজে উঠি নাই, বেলনে চড়ি নাই, কয়লার খনির মধ্যে নামি নাই—কিন্তু আমার নিজের মানসী আদশের সম্বন্ধে আমি যে সম্পণে ভ্রান্ত এবং অজ্ঞ ছিলাম তাহা এই উত্তরদিকের বারান্দায় আসিবার প্রবে: সন্দেহমাত্র করি নাই। বয়স একুশ প্রায় উত্তীণ হয়, ইতিমধ্যে আমার অন্তঃকরণ কল্পনাযোগবলে নারীসৌন্দয্যের একটা ধ্যানমাতি যে সজন করিয়া লয় নাই, এ কথা বলিতে পারি না। সেই মতিকে নানা বেশভূষায় সজিত এবং নানা অবস্থার মধ্যে স্থাপন করিয়াছি, কিন্তু কখনও সদের সবপ্নেও তাহার পায়ে জনতা, গায়ে জামা, হাতে বই দেখিব এমন আশাও করি নাই, ইচ্ছাও করি নাই। কিন্তু আমার লক্ষী ফাল্গনশেষের অপরাহুে প্রবীণ তরশ্রেণীর আকল্পিত ঘনপল্লববিতানে দীঘনিপতিত ছায়া এবং আলোক-রেখাঙ্কিত পাপবনপথে, জনতা পায়ে দিয়া, জামা গায়ে দিয়া বই হাতে করিয়া, দুইটি জামগাছের আড়ালে অকস্মাৎ দেখা দিলেন— আমিও কোনো কথাটি কহিলাম না। দুইমিনিটের বেশি আর দেখা গেল না। নানা ছিদ্ৰ দিয়া দেখিবার নানা চেষ্টা করিয়াছিলাম কিন্তু কোনো ফল পাই নাই। সেইদিন প্রথম সন্ধ্যার প্রাক্কালে বটবৃক্ষতলে