পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○c 8 গল্পগুচ্ছ প্রসারিত-চরণে বসিলাম— আমার চোখের সম্মুখে পরপারের ঘনীভূত তরশ্রেণীর উপর সন্ধ্যাতারা প্রশান্ত সিমতহাস্যে উদিত হইল, এবং দেখিতে দেখিতে সন্ধ্যাশ্রী আপন নাথহীন বিপলে নিজন বাসরগাহের বার খলিয়া নিঃশব্দে দাঁড়াইয়া রহিল। ষে বইখানি তাহার হাতে দেখিয়াছিলাম সে আমার পক্ষে একটা নতন রহস্যনিকেতন হইয়া দাঁড়াইল। ভাবিতে লাগিলাম, সেটা কী বই। উপন্যাস অথবা কাব্য ? তাহার মধ্যে কী ভাবের কথা আছে। যে পাতাটি খোলা ছিল এবং যাহার উপর সেই অপরাহুবেলার ছায়া ও রবিরশিম, সেই বকুলবনের পল্লবমমর এবং সেই যুগলচক্ষর ঔৎসক্যপণে স্থিরদটি নিপতিত হইয়াছিল, ঠিক সেই পাতাটিতে গল্পের কোন অংশ, কাব্যের কোন রসটকুে প্রকাশ পাইতেছিল। সেই সঙ্গে ভাবিতে লাগিলাম, ঘনমন্ত কেশজালের অন্ধকারচ্ছায়াতলে সকুমার ললাটমণ্ডপটির অভ্যন্তরে বিচিত্র ভাবের আবেশ কেমন করিয়া লীলায়িত হইয়া উঠিতেছিল, কুমারীহদয়ের নিভৃত নিজনতার উপরে নব নব কাব্যমায়া কী অপব সৌন্দয লোক সজন করিতেছিল-- অধোঁক রাত্রি ধরিয়া এমন কত কী ভাবিয়াছিলাম তাহা পরিসফটেরপে বান্ত করা অসম্ভব। কিন্তু সে যে কুমারী এ কথা আমাকে কে বলিল। আমার বহুপববতী প্রেমিক দষান্তকে পরিচয়লাভের পবেই যিনি শকুন্তলা সম্বন্ধে আশ্বাস দিয়াছিলেন, তিনিই । তিনি মনের বাসনা; তিনি মানুষকে সত্য মিথ্যা ঢের কথা অজস্র বলিয়া থাকেন; কোনোটা খাটে, কোনোটা খাটে না, দ্যষ্যতের এবং আমারটা খাটিয়া গিয়াছিল। আমার এই অপরিচিতা প্রতিবেশিনী বিবাহিতা কি কুমারী কি ব্ৰাহরণ কি শদ্রে, সে সংবাদ লওয়া আমার পক্ষে কঠিন ছিল না ; কিন্তু তাহা করিলাম না, কেবল নীরব চকোরের মতো বহুসহস্ৰ যোজন দর হইতে আমার চন্দ্রমণ্ডলটিকে বেষ্টন করিয়া করিয়া উধন কন্ঠে নিরীক্ষণ করিবার চেস্টা করিলাম । পরদিন মধ্যাহ্নে একখানি ছোটো নৌকা ভাড়া করিয়া তীরের দিকে চাহিয়া জোয়ার বাহিয়া চলিলাম, মাল্লাদিগকে দাঁড় টানিতে নিষেধ করিয়া দিলাম । আমার শকুন্তলার তপোবনকুটিরটি গঙ্গার ধারেই ছিল। কুটিরটি ঠিক কবের কুটিরের মতো ছিল না; গঙ্গা হইতে ঘাটের সিড়ি বহৎ বাড়ির বারান্দার উপর উঠিয়াছে, বারান্দাটি ঢাল কাঠের ছাদ দিয়া ছায়াময়। আমার নৌকাটি যখন নিঃশব্দে ঘাটের সম্মুখে ভাসিয়া আসিল দেখিলাম, আমার নবযুগের শকুন্তলা বারান্দার ভূমিতলে বসিয়া আছেন ; পিঠের দিকে একটা চৌকি, চৌকির উপরে গোটাকতক বই রহিয়াছে, সেই বইগুলির উপরে তাঁহার খোলা চুল সতপোকারে ছড়াইয়া পড়িয়াছে, তিনি সেই চৌকিতে ঠেস দিয়া উধামুখ করিয়া উত্তোলিত বাম বাহর উপর মাথা রাখিয়াছেন, নৌকা হইতে তাঁহার মাখ অদশ্য, কেবল সকোমল কণ্ঠের একটি স্কুমার বক্তরেখা দেখা যাইতেছে, খোলা দুইখানি পদপল্লবের একটি ঘাটের উপরের সিড়িতে এবং একটি তাহার নীচের সিড়িতে প্রসারিত, শাড়ির কালো পাড়টি বাঁকা হইয়া পড়িয়া সেই দটি পা বেস্টন করিয়া আছে। একখানা বই মনোযোগহীন শিথিল দক্ষিণ হস্ত হইতে প্রস্ত হইয়া ভূতলে পড়িয়া রহিয়াছে। মনে হইল, যেন মতিমতী মধ্যাহ্নলক্ষয়ী। সহসা দিবসের কমের মাঝখানে একটি নিপঙ্গসন্দেরী অবসরপ্রতিমা। পদতলে গঙ্গা, সম্মখে সদের পরপার এবং উধের তীব্রতাপিত নীলাবর তাহাদের সেই অন্তরাত্মারপিপাঁর দিকে, সেই দটি খোলা পা, সেই অলস