পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ළු HO গল্পগুচ্ছ ধায় না। কিরণ সেখান হইতে মজমান এই হতভাগ্যের কেশপাশ ধরিয়া যখন তাহার আমতলায়, তাহার বেগনের খেতে টানিয়া তুলিল তখন পায়ের তলায় মাটি পাইয়া আমি বাঁচিয়া গেলাম। আমি দেখিলাম, বারামদায় বসিয়া খিচুড়ি রাধিয়া, মই চড়িয়া দেয়ালে পেরেক মারিয়া, লেবগোছে ঘনসবুজ পত্ররাশির মধ্য হইতে সবঙ্গে লেবফল সন্ধান করিতে সাহায্য করিয়া অভাবনীয় আনন্দ লাভ করা যায়, অথচ সে আনন্দলাভের জন্য কিছুমাত্র প্রয়াস পাইতে হয় না— আপনি যে কথা মুখে আসে, আপনি যে হাসি উচ্ছসিত হইয়া উঠে, আকাশ হইতে যতটুকু আলো আসে, এবং গাছ হইতে যতটুকু ছায়া পড়ে তাহাই যথেষ্ট। ইহা ছাড়া আমার কাছে একটি সোনার কাঠি ছিল আমার নবযৌবন, একটি পরশপাথর ছিল আমার প্রেম, একটি অক্ষয় কল্পতরু ছিল আমার নিজের প্রতি নিজের অক্ষয় বিশ্বাস। আমি বিজয়ী, আমি ইন্দ্র, আমার উচ্চৈঃশ্রবার পথে কোনো বাধা দেখিতে পাই না। কিরণ, আমার কিরণ, তাহাতে আমার সন্দেহ নাই। সে কথা এতক্ষণ স্পষ্ট করিয়া বলি নাই, কিন্তু হৃদয়ের এক প্রান্ত হইতে আর-এক প্রান্ত মহত্যের মধ্যে মহাসুখে বিদীর্ণ করিয়া সে কথা বিদ্যতের মতো আমার সমস্ত অন্তঃকরণ ধধিয়া ক্ষণে ক্ষণে নাচিয়া উঠিতেছিল। কিরণ, আমার কিরণ ! ইতিপবে আমি কোনো অনাত্মীয়া মহিলার সংস্রবে আসি নাই, যে নব্যরমণীগণ শিক্ষালাভ করিয়া অবরোধেব বাহিরে সঞ্চরণ করেন তাঁহাদের রীতিনীতি আমি কিছুই অবগত নহি, অতএব তাঁহাদের আচরণে কোনখানে শিষ্টতার সীমা, কোনখানে প্রেমের অধিকার তাহা আমি কিছুই জানি না ; কিন্তু ইহাও জানি না, আমাকে কেনই বা ভালো না বাসিবে, আমি কোন অংশে নন। কিরণ যখন আমার হাতে চায়ের পেয়ালাটি দিয়া যাইত তখন চায়ের সঙ্গে পাত্রভরা কিরণের ভালোবাসাও গ্রহণ করিতাম ; চাটি যখন পান করিতাম তখন মনে করিতাম, আমার গ্রহণ সার্থক হইল এবং কিরণেরও দান সাথক হইল। কিরণ যদি সহজ সরে বলিত “মহীন্দ্রবাবু, কাল সকালে আসবেন তো ?” তাহার মধ্যে ছন্দে লয়ে বাজিয়া উঠিত— - कौ टभाश्निौ छान, वन्थद, कौ cश्राझिनौ खान ! অবলার প্রাণ নিতে নাহি তোমা-হেন ! আমি সহজ কথায় উত্তর করিতাম, “কাল আটটার মধ্যে আসব।” তাহার মধ্যে কিরণ কি শুনিতে পাইত না— পরানপতলি তুমি হিয়ে-মণিহার, সরবস ধন মোর সকল সংসার । আমার সমস্ত দিন এবং সমস্ত রাত্রি অমতে পাণ তইবা গেল। আমার সমস্ত চিন্তা এবং সমস্ত কল্পনা মহোতে মহোতে নতন নতন শাখাপ্রশাখা বিস্তার করিয়া লতার ন্যায় কিরণকে আমার সহিত বেস্টন করিয়া বাঁধতে লাগিল। যখন শতঅবসর আসিবে তখন কিরণকে কী পড়াইব কী শিখাইব কী শনাইল, কী দেখাইব তাহারই অসংখ্য সংকল্পে আমার মন আচ্ছন্ন হইয়া গেল। এমনকি স্থির করিলাম জমানপণ্ডিত-রচিত দশনশাস্তের নব্য ইতিহাসেও যাহতে তাহার চিত্তের ঔৎসক জন্মে এমন শিক্ষা তাহাকে দিতে হইবে, নতুবা আমাকে সে সবাতোভাবে বকিতে