পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯৪ গল্পগুচ্ছ # * মণিহারা সেই জীণ প্রায় বাঁধাঘাটের ধারে আমার বোট লাগানো ছিল। তখন সবে অস্ত গিয়াছে। বোটের ছাদের উপরে মাঝি নমাজ পড়িতেছে। পশ্চিমের জলন্ত আকাশপটে তাহার নীরব উপাসনা ক্ষণে ক্ষণে ছবির মতো অাঁকা পড়িতেছিল। স্থির রেখাহীন নদীর জলের উপর ভাষাতীত অসংখ্য বণ"চ্ছটা দেখিতে দেখিতে ফিকা হইতে গাঢ় লেখায়, সোনার রঙ হইতে ইস্পাতের রঙে, এক অভিা হইতে আর-এক আভায় মিলাইয়া আসিতেছিল। জানালা-ভাঙা বারান্দা-ঝলিয়া-পড়া জরাগ্রস্ত বহৎ অট্টালিকার সম্মুখে অশ্বথমল-বিদারিত ঘাটের উপরে ঝিল্লিমুখর সন্ধ্যবেলায একলা বসিয, আমার শতক চক্ষর কোণ ভিজিবে-ভিজিবে করিতেছে, এমন সমযে মাথা হইতে পা পযন্ত হঠাৎ চমকিয়া উঠিয়া শুনিলাম, “মহাশয়ের কোথা হইতে আগমন ।” দেখিলাম, ভদ্রলোকটি স্বলপাহারশীণ, ভাগ্যলক্ষয়ী কতৃক নিতান্ত অনাদত । বাংলাদেশের অধিকাংশ বিদেশী চাকরের যেমন একরকম বহুকালজীণ সংস্কারবিহীন চেহারা, ই’হারও সেইরুপ ধতির উপরে একখানি মলিন তৈলাক্ত আসামী মটকার বোতাম-খোলা চাপকান ; কম ক্ষেত্র হইতে যেন অপেক্ষণ হইল ফিরিতেছেন । এবং যে সময় কিঞ্চিৎ জলপান খাওয়া উচিত ছিল সে সময় হতভাগ্য নদীতীরে কেবল সন্ধ্যার হাওয়া খাইতে আসিয়াছেন। আগন্তুক সোপানপাশেব আসনগ্রহণ করিলেন । আমি কহিলাম, “আমি রাঁচি হইতে আসিতেীছ ।” “ੀ করা হয় ן" “ব্যাবসা করিয়া থাকি।” “কণী ব্যাবসা ।” “হরীতকী, রেশমের গল্পটি এবং কাঠের ব্যাবসা ।” “কণী নাম।” ঈষৎ থামিয়া একটা নাম বলিলাম। কিন্তু সে আমার নিজের নাম নহে । ভদ্রলোকের কৌতুহলনিবত্তি হইল না। পনরায় প্রশন হইল, “এখানে কী করিতে আগমন ।” আমি কহিলাম, “বায় পরিবতন।” লোকটি কিছু আশ্চর্য হইল। কহিল, “মহাশয়, আজ প্রায় ছয় বৎসর ধরিয়া এখানকার বায় এবং তাহার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যহ গড়ে পনেরো গ্রেন করিয়া কুইনাইন আমি কহিলাম, “এ কথা মানিতেই হইবে রাঁচি হইতে এখানে বায়রে যথেষ্ট পরিবতন দেখা যাইবে।” তিনি কহিলেন, “আজ্ঞা হাঁ, যথেষ্ট। এখানে কোথায় বাসা করিবেন।” আমি ঘাটের উপরকার জীণবাড়ি দেখাইয়া কহিলাম, “এই বাড়িতে।"