পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8>や গল্পগুচ্ছ একটা বিয়েথাওয়া দিয়া দাও!” স্বামী যদি ঠাট্টা করিয়া বলিতেন তা বেশ তো পিসিমা, তোমরা দেখিয়া-শনিয়া একটা ঘটকালি করিয়া দাও-না তাহা হইলে সমস্ত পরিকার হইয়া যাইত। কিন্তু তিনি কুণ্ঠিত হইয়া কহিলেন, "আঃ পিসিমা, কী বলিতেছ।” পিসিমা উত্তর করিলেন, "কেন, অন্যায় কী বলিতেছি। আচ্ছা বউমা, তুমিই বলো তো বাছা।” আমি হাসিয়া কহিলাম, “পিসিমা, ভালো লোকের কাছে পরামশ চাহিতেছ। যাহার গঠি কাটিতে হইবে তাহার কি কেহ সম্মতি নেয়।” পিসিমা উত্তর করিলেন, “হা, সে কথা ঠিক বটে। তা, তোতে আমাতে গোপনে পরামর্শ করিব, কী বলিস, অবিনাশ । তাও বলি, বউমা, কুলীনের মেয়ের সতিন যত বেশি হয়, তাহার বামিগৌরব ততই বাড়ে। আমাদের ছেলে ডাক্তারি না করিয়া যদি বিবাহ করিত, তবে উহার রোজগারের ভাবনা কী ছিল। রোগী তো ডাক্তারের হাতে পড়িলেই মরে, মরিলে তো আর ভিজিট দেয় না, কিন্তু বিধাতার শাপে কুলীনের সত্রীর মরণ নাই এবং সে যতদিন বাঁচে ততদিনই স্বামীর লাভ।” দইদিন বাদে আমার স্বামী আমার সম্মখে পিসিমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “পিসিমা, আত্মীয়ের মতো করিয়া বউষের সাহায্য করিতে পারে, এমন একটি ভদ্র ঘরের সীলোক দেখিয়া দিতে পার ? উনি চোখে দেখিতে পান না, সবাদা ওঁর একটি সঙ্গিনী কেহ থাকিলে আমি নিশ্চিত থাকিতে পারি।” যখন নতন অন্ধ হইয়াছিলাম তখন এ কথা বলিলে খাটিত, কিন্তু এখন চোখের অভাবে আমার কিবা ঘরকন্নার বিশেষ কী অসুবিধা হয় জানি না; কিন্তু প্রতিবাদমাত্র না করিয়া চুপ করিয়া রহিলাম। পিসিমা কহিলেন, “অভাব কী। আমারই তো ভাসরের এক মেয়ে আছে, যেমন সন্দেরী তেমনি লক্ষী। মেয়েটির বয়স হইল, কেবল উপযুক্ত বরের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করিয়া আছে; তোমার মতো কুলীন পাইলে এখনই বিবাহ দিয়া দেয়।” স্বামী চকিত হইয়া কহিলেন, “বিবাহের কথা কে বলিতেছে।” পিসিমা কহিলেন “ওমা, বিবাহ না করিলে ভদ্র ঘরের মেয়ে কি তোমার ঘরে অমনি আসিয়া পড়িয়া থাকিবে।” কথাটা সংগত বটে এবং স্বামী তাহার কোনো সদত্তের দিতে পারিলেন না । আমার রন্ধ চক্ষর অনন্ত অন্ধকারের মধ্যে আমি একলা দাঁড়াইয়া উধামুখে ডাকিতে লাগিলাম, ভগবান, আমার স্বামীকে রক্ষা করে। তাহার দিনকয়েক পরে একদিন সকালবেলায় আমার পজা-আহ্নিক সারিয়া বাহিরে আসিতেই পিসিমা কহিলেন, “বউমা, যে ভাসরঝির কথা বলিয়াছিলাম সেই আমাদের হেমাঙ্গিনী আজ দেশ হইতে আসিয়াছে ! হিম, ইনি তোমার দিদি, ইহাকে প্রণাম করো ।” এমনসময় আমার স্বামী হঠাৎ আসিয়া যেন অপরিচিত সীলোককে দেখিয়া ফিরিয়া যাইতে উদ্যত হইলেন। পিসিমা কহিলেন, “কোথা যাস, অবিনাশ।” বামী জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইনি কে।” পিসিমা কহিলেন, “এই মেয়েটিই আমার সেই ভাসরঝি হেমাঙ্গিনী।” ইহাকে কখন আনা হইল, কে আনিল, কী বক্তাত লইয়া আমার স্বামী বারবার অনেক অনাবশ্যক বিস্ময় প্রকাশ করিতে লাগিলেন। আমি মনে-মনে কহিলাম, যাহা ঘটিতেছে তাহা তো সবই বকিতেছি, কিন্তু ইহার উপরে আবার ছলনা আরম্ভ হইল। লকোচুরি, ঢাকাঢাকি, মিথ্যাকথা অধম করিতে যদি হয় তো করো, সে নিজের অশান্ত প্রবত্তির জন্য, কিন্তু আমার জন্য