পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 গল্পগুচ্ছ গৌরসন্দর দায়ে পড়িয়া মত দিলেন কিন্তু মনে-মনে যজ্ঞেশবরের প্রতি অত্যন্ত রাগ করিলেন। তখন দুই পক্ষে কথাবাত চলিতে লাগিল। আর-সব ঠিক হইল কিন্তু বিবাহ হইবে কোথায় তাহা লইয়া কিছতেই নিপত্তি হয় না। গৌরসন্দর এক ছেলের বিবাহে খাব ধমধাম করিতে চান, কিন্তু বড়াশিবতলার সেই খোড়ো ঘরে সমস্ত ধামধাম ব্যথ হইয়া যাইবে। তিনি জেদ করিলেন, তাঁহারই বাড়িতে বিবাহসভা হইবে। শনিয়া মাতৃহীনা কন্যার দিদিমা কন্না জড়িয়া দিলেন। তাঁহাদেরও তো এক সময় সদিন ছিল, আজ লক্ষী বিমুখ হইয়াছেন বলিয়া কি সমস্ত সাধ জলাঞ্জলি দিতে হইবে, পিতৃপরষের মান বজায় থাকিবে না ? সে হইবে না; আমাদের ঘর খোড়ো হউক আর যাই হউক, এইখানেই বিবাহ দিতে হইবে। নিরীহপ্রকৃতি যজ্ঞেশ্বর অত্যন্ত বিধায় পড়িয়া গেলেন। অবশেষে বিভূতিভূষণের চেষ্টায় কন্যাগহেই বিবাহ সিথর হইল। ইহাতে গৌরসন্দর এবং তাঁহার দলবল কন্যাকতার উপর আরও চটিয়া গেলেন। সকলেই স্থির করিলেন, পধি’ত দরিদ্রকে অপদস্থ করিতে হইবে। বরযাত্র যাহা জোটানো হইল তাহা পলটনবিশেষ । এ সম্বন্ধে গৌরসন্দর ছেলের কোনো পরামর্শ লইলেন না। বৈশাখ মাসে বিবাহের দিন সিথর হইল। যজ্ঞেশ্বর তাহার স্বল্পাবশিষ্ট যথাসব সব পণ করিয়া আয়োজন করিয়াছে। নতন আটচালা বধিয়াছে, পাবনা হইতে ঘি ময়দা চিনি দধি প্রভৃতি আনাইয়াছে। জ্যাঠাইমা তাঁহার যে গোপন পজির বলে বগহেই বিবাহপ্রস্তাবে জেদ করিয়াছিলেন তাহার প্রায় শেষ পয়সাটি পর্যন্ত বাহির করিয়া দিয়াছেন । এমনসময় দভোগার অদষ্টরুমে বিবাহের দুইদিন আগে হইতে প্রচণ্ড দ্যযোগ আরম্ভ হইল। ঝড় যদি-বা থামে তো বৃষ্টি থামে না, কিছুক্ষণের জন্য যদি-বা নরম পড়িয়া আসে আবার বিগণে বেগে আরম্ভ হয়। এমন বর্ষণ বিশ পঁচিশ বছরের মধ্যে কেহ দেখে নাই। গৌরসন্দর পাব হইতেই গুটিকতক হাতি ও পালকি স্টেশনে হাজির রাখিয়াছিলেন। আশপাশের গ্রাম হইতে যজ্ঞেশ্বর ছইওয়ালা গোরুর গাড়ির জোগাড় করিতে লাগিলেন। দুদিনে গাড়োয়ানরা নড়িতে চায় না, হাতে পায়ে ধরিয়া বিগণ মলে কবল করিয়া যজ্ঞেশ্বর তাহাদের রাজি করিলেন। বরষারের মধ্যে যাহাদিগকে গোরর গাড়িতে চড়িতে হইল তাহারা চটিয়া আগন হইল। গ্রামের পথে জল দাঁড়াইয়া গেছে। হাতির পা বসিয়া যায়, গাড়ির চাকা ঠেলিয়া তোলা দায় হইল। তখনও বন্টির বিরাম নাই। বরযাত্ৰগণ ভিজিয়া, কাদা মাখিরা, বিধিবিড়ম্ববনার প্রতিশোধ কন্যাকতার উপর তুলিবে বলিয়া মনে-মনে স্থির করিয়া রাখিল। হতভাগ্য যজ্ঞেশ্বরকে এই অসাময়িক বটির জন্য জবাবদিহি করিতে হইবে ।