পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তারাপ্রসমের কীতি O& কিন্তু অনভিজ্ঞ স্বামীও অপরিচিত বিদেশে সত্ৰীকন্যা সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতে অত্যন্ত ভাঁত ও অসম্মত। অবশেষে দাক্ষায়ণী পাড়ার একটি চতুর লোককে স্বামীর নিত্য-অভ্যাস সম্বন্ধে সহস্র উপদেশ দিয়া আপনার পদে নিযুক্ত করিয়া দিলেন। এবং স্বামীকে অনেক মাথার দিব্য ও অনেক মাদলি-তাগায় আচ্ছন্ন করিয়া বিদেশে রওনা করিয়া দিলেন। এবং ঘরে আছড়ে খাইয়া কাঁদিতে লাগিলেন। কলিকাতায় আসিয়া তারাপ্রসন্ন তাঁহার চতুর সঙ্গীর সাহায্যে 'বেদান্তপ্রভাকর প্রকাশ করিলেন । দাক্ষায়ণীর গহনা বন্ধক রাখিয়া যে টাকা ক'টি পাইয়াছিলেন তাহার অধিকাংশই খরচ হইয়া গেল । বিকুয়ের জন্য বহির দোকানে এবং সমালোচনার জন্য দেশের ছোটো-বড়ো সমস্ত সম্পাদকের নিকট 'বেদান্তপ্রভাকর পাঠাইয়া দিলেন। ডাকযোগে গহিণীকেও একখানা বই রেজেস্টারি করিয়া পাঠাইলেন। আশঙ্কা ছিল, পাছে ডাকওয়ালারা পথের মধ্য হইতে চুরি করিয়া লয়। গহিণী যেদিন ছাপার বইয়ের উপরের পাঠায় ছাপার অক্ষরে তাঁহার স্বামীর নাম দেখিলেন সেদিন পাড়ার সকল মেয়েকে নিমন্ত্রণ করিয়া খাওয়াইলেন । যেখানে সকলে আসিয়া বসিবার কথা সেইখানে বইটা ফেলিয়া রাখিলেন। সকলে আসিয়া বসিলে উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, “ওমা, বইটা ওখানে কে ফেলে রেখেছে। অন্নদা, বইটা দাও-না ভাই, তুলে রাখি।” উহাদের মধ্যে অন্নদা পড়িতে জানে। বইটা কুলঙ্গির উপর তুলিয়া রাখলেন। মহত পরেই একটা জিনিস পাড়িতে গিয়া ফেলিয়া দিলেন— তার পরে নিজের ব.ড়ামেয়েকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, "শশী, বাবার বই পড়তে ইচ্ছে হয়েছে বকি ? তা নে-না মা, পড় না। তাতে লক্ষজা কী " বাবার বহির প্রতি শশীর কিছুমার আগ্রহ ছিল না। কিছুক্ষণ পরেই তাহাকে ভৎসনা করিয়া বলিলেন, “ছি মা, বাবার বই অমন করে নষ্ট করতে নেই, তোমার কমলাদিদির হাতে দাও, উনি ওই আলমারির মাথায় তুলে রাখবেন।” বহির যদি কিছুমাত্র চেতনা থাকিত তাহা হইলে সেই একদিনের উৎপীড়নে বেদান্তের প্রাণান্তপরিচ্ছেদ হইত। একে একে কাগজে সমালোচনা বাহির হইতে লাগিল। গহিণী যাহা ঠাহরাইয়াছিলেন তাহা অনেকটা সত্য হইয়া দাঁড়াইল। গ্রন্থের এক অক্ষর বকিতে না পারিয়া দেশসন্ধে সমালোচক একেবারে বিহল হইয়া উঠিল। সকলেই একবাক্যে কহিল, “এমন সারবান গ্রন্থ ইতিপবে প্রকাশিত হয় নাই।” যে-সকল সমালোচক রেনলডস-এর লণ্ডন-রহস্যের বাংলা অনুবাদ ছাড়া আরকোনো বই স্পশ করিতে পারে না তাহারা অত্যন্ত উৎসাহের সহিত লিখিল, “দেশের ঝড়ি ঝড়ি নাটক-নবেলের পরিবতে' যদি এমন দই-একখানি গ্রন্থ মধ্যে মধ্যে বাহির হয় তবে বঙ্গসাহিতা বাসতবিকই পাঠ্য হয় ।” যে ব্যক্তি পরষোনক্রেমে বেদান্তের নাম কখনও শনে নাই সেই কেবল লিখিল, "তারাপ্রসন্নবাবরে সহিত সকল পথানে আমাদের মতের মিল হয় নাই— গথানাভাববশত এ স্থলে তাহার উল্লেখ করিলাম না। কিন্তু মোটের উপর গ্রন্থকারের সহিত