পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नणप्लेनौफ़ 8a○ অষ্টম পরিচ্ছেদ সন্ধ্যার সময় বারান্দার টব হইতে জ:ইফলের গন্ধ আসিতেছিল। ছিন্ন মেঘের ভিতর দিয়া স্নিগ্ধ আকাশে তারা দেখা যাইতেছিল। আজ চার চুল বাঁধে নাই, কাপড় ছাড়ে নাই। জানলার কাছে অন্ধকারে বসিয়া আছে, মদ বাতাসে আস্তে আস্তে তাহার খোলা চুল উড়াইতেছে, এবং তাহার চোখ দিয়া এমন কর ঝর করিয়া কেন জল বহিয়া যাইতেছে তাহা সে নিজেই বুঝিতে পারিতেছে না। এমনসময় ভূপতি ঘরে প্রবেশ করিল। তাহার মুখ অত্যন্ত লান, হাদয় ভারাকান্ত। ভূপতির আসিবার সময় এখন নহে। কাগজের জন্য লিখিয়া, প্রফে দেখিয়া অন্তঃপরে আসিতে প্রায়ই তাহার বিলম্বব হয়। আজ সন্ধ্যার পরেই যেন কোন সানা-প্রত্যাশার চাররে নিকট আসিয়া উপস্থিত হইল। ঘরে প্রদীপ জলিতেছিল না। খোলা জালনার ক্ষীণ আলোকে ভূপতি চারকে বাতায়নের কাছে অস্পষ্ট দেখিতে পাইল ; ধীরে ধীরে পশ্চাতে আসিয়া দাঁড়াইল । পদশব্দ শুনিতে পাইয়াও চার মখে ফিরাইল না— মতিটির মতো স্থির হইয়া কঠিন হইয়া বসিয়া রহিল। ভূপতি কিছু আশ্চর্য হইয়া ডাকিল, “চার্য।” ভূপতির কন্ঠস্বরে সচকিত হইয়া তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িল। ভূপতি আসিয়াছে সে তাহা মনে করে নাই। ভূপতি চারীর মাথার চুলের মধ্যে আঙুল বলাইতে বলাইতে স্নেহদ্র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, “অন্ধকারে তুমি যে একলাটি বসে আছ, চার - মন্দা কোথায় গেল।” চার যেমনটি আশা করিয়াছিল আজ সমস্ত দিন তাহার কিছরই হইল না। সে নিশ্চয় স্থির করিয়াছিল অমল আসিয়া ক্ষমা চাহিবে—সেজন্য প্রস্তুত হইয়া সে প্রতীক্ষা করিতেছিল, এমনসময় ভূপতির অপ্রত্যাশিত কণ্ঠস্বরে সে যেন আর আত্মসম্বরণ করিতে পারিল না. একেবারে কদিয়া ফেলিল । ভূপতি ব্যস্ত হইয়া বাথিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “চার কী হয়েছে, চার ।” কী হইয়াছে তাহা বলা শক্ত। এমনই কী হয়েছে। বিশেষ তো কিছই হয় নাই। অমল নিজের নতন লেখা প্রথমে তাহাকে না শনাইয়া মন্দাকে শনাইয়াছে, এ কথা লইয়া ভূপতির কাছে কী নালিশ করিবে। শুনিলে কি ভূপতি হাসিবে না। এই তুচ্ছ ব্যাপারের মধ্যে গরতের নালিশের বিষয় যে কোনখানে লুকাইয়া আছে তাহা খ:জিয়া বাহির করা চারীর পক্ষে অসাধা। অকারণে সে যে কেন এত অধিক কষ্ট পাইতেছে, ইহাই সম্পণ কঝিতে না পারিয়া তাহার কষ্টের বেদনা আরও বাড়িয়া উঠিয়াছে। ভূপতি। বলো-না চার তোমার কী হয়েছে! আমি কি তোমার উপর কোনো অন্যায় করেছি। তুমি তো জানই, কাগজের কাট নিয়ে আমি কীরকম ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছি, যদি তোমার মনে কোনো আঘাত দিয়ে থাকি সে আমি ইচ্ছে করে দিই নি। ভূপতি এমন বিষয়ে প্রশ্ন করিতেছে যাহার একটিও জবাব দিবার নাই, সেজন্য চার ভিতরে ভিতরে অধীর হইয়া উঠিল; মনে হইতে লাগিল, ভূপতি এখন তাহাকে নিকৃতি দিয়া ছাড়িয়া গেলে সে বীচে।