পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ぬミ গল্পগুচ্ছ লিখিবার যথেষ্ট সংযোগ হয়তো ছিল না, বিলাতে পোছিয়া অমল লক্ষবা চিঠি লিখিবে। কিন্তু সে লবা চিঠি আসিল না। প্রত্যেক মেল আসিবার দিনে চার তাহার সমস্ত কাজকম"-কথাবাতার মধ্যে ভিতরে ভিতরে ছটফট করিতে থাকিত। পাছে ভূপতি বলে “তোমার নামে চিঠি নাই” এইজন্য সাহস করিয়া ভূপতিকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে পারিত না। এমন অবস্থায় একদিন চিঠি আসিবার দিনে ভূপতি মন্দগমনে আসিয়া মদহোস্যে কহিল, “একটা জিনিস আছে, দেখবে ?” চার ব্যস্তসমস্ত চমকিত হইয়া কহিল, “কই, দেখাও।” ভূপতি পরিহাসপবেক দেখাইতে চাহিল না। চার অধীর হইয়া উঠিয়া ভূপতির চাদরের মধ্য হইতে বাঞ্ছিত পদাৰ্থ কাড়িয়া লইবার চেষ্টা করিল। সে মনে-মনে ভাবিল, “সকাল হইতেই আমার মন বলিতেছে, আজ আমার চিঠি আসিবেই—এ কখনও ব্যথা হইতে পারে না।" ভূপতির পরিহাসপহা ক্ৰমেই বাড়িয়া উঠিল; সে চারকে এড়াইয়া খাটের চারি দিকে ফিরিতে লাগিল। তখন চার একান্ত বিরক্তির সহিত খাটের উপর বসিয়া চোখ ছলছল করিয়া छूलिब्न । চারীর একান্ত আগ্রহে ভূপতি অত্যন্ত খুশি হইয়া চাদরের ভিতর হইতে নিজের রচনার খাতাখানা বাহির করিয়া তাড়াতাড়ি চারীর কোলে দিয়া কহিল, “রাগ কোরো না। এই নাও।” অস্টাদশ পরিচ্ছেদ অমল যদিও ভূপতিকে জানাইয়াছিল যে, পড়াশনার তাড়ায় সে দীর্ঘকাল পত্র লিখিতে সময় পাইবে না, তব দই-এক মেল তাহার পত্র না আসাতে সমস্ত সংসার চারর পক্ষে কণ্টকশয্যা হইয়া উঠিল। সন্ধ্যাবেলায় পাঁচ কথার মধ্যে চার অত্যন্ত উদাসীনভাবে শান্তস্বরে তাহার স্বামীকে কহিল, “আচ্ছা দেখো, বিলেতে একটা টেলিগ্রাফ করে জ্ঞানলে হয় না, অমল কেমন আছে ?” ভূপতি কহিল, "দুই হন্তা আগে তার চিঠি পাওয়া গেছে, সে এখন পড়ায় ব্যস্ত ।” চার। ওঃ, তবে কাজ নেই। আমি ভাবছিলাম, বিদেশে আছে, যদি ব্যামোস্যামো হয়— বলা তো যায় না । ভূপতি। নাঃ, তেমন কোনো ব্যামো হলে খবর পাওয়া যেত। টেলিগ্রাফ করাও তো কম খরচা নয় । চার। তাই নাকি। আমি ভেবেছিলাম, বড়োজোর এক টাকা কি দ্য টাকা লাগবে। ভূপতি। বল কী, প্রায় একশো টাকার ধাক্কা । চার। তা হলে তো কথাই নেই!